৬ মে, ১৯৪৫। দীর্ঘ আট বছরের যুদ্ধের পর ইউরোপের আকাশ মাটি এবং সমুদ্র অনেকটাই শান্ত হয়ে এসেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়নি, তবে অক্ষশক্তির পরাজয় আসন্ন। ইতিমধ্যে ইতালি আত্মসমর্পণ করেছে। তবে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরেও যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে জার্মানির বাহিনী। এমন সময় কক্সহাভেনের সমুদ্র উপকূলে প্রবেশ করল ব্রিটিশ নৌবাহিনী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সেটাই শেষ যুদ্ধ। পরের দিন পর্যন্ত প্রবল বিক্রমে প্রতিরোধের চেষ্টা করেও অবশেষে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয় জার্মান বাহিনী।
এই অন্তিম যুদ্ধের আগে সমস্ত সহযোদ্ধাদের প্রতি অন্তিম শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছিলেন লেফটেন্যান্ট কানকেল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সেটাই শেষ বেতার সংকেত। ৭ মে সকাল ৭:৩৫, ব্রিটিশ বাহিনীর আক্রমণের কথা জানিয়ে সমস্ত রেডিও ট্রাফিক সিজ করার নির্দেশ দিলেন লেফটেন্যান্ট কানকেল। তারপর আর কোনো সংকেত পাওয়া যায়নি। অবশেষে দীর্ঘ ৭৫ বছর পর প্রকাশ্যে এল সেই বেতার বার্তা। প্রকাশ করলেন ইংল্যান্ডের গোয়েন্দা ও সুরক্ষা দপ্তরের কর্মকর্তারা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বেতার যোগাযোগের জন্য জার্মানির সেনাবাহিনী একধরনের সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করতো। এই ভাষাকে বলা হত এনিগমা। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, কম্পিউটার প্রযুক্তির সাহায্যে ব্রিটিশ বাহিনী সেই ভাষার সংকেত উদ্ধার করতে পেরেছিল ১৯৪০ সালেই। ফলে জার্মানির অনেক গোপনীয় তথ্যই আর গোপন থাকেনি। যুদ্ধের পর মিত্রশক্তি এই ঘটনার কথা জানায়। আর ততদিনে কম্পিউটার প্রযুক্তিকে ঘিরে মানুষের উৎসাহও বেড়ে গিয়েছে অনেকগুণ। তবে জার্মানির সেইসব গোপনীয় বেতার বার্তা প্রকাশ করেনি ইংল্যান্ডের গোয়েন্দা বিভাগ। অবশেষে এবছরের বিজয় দিবসে, ৭ মে বেশ কিছু পুরনো বেতার বার্তা প্রকাশিত হল।
পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বিধ্বংসী যুদ্ধ শেষ হয়েছিল ৭ মে, ১৯৪৫। যদিও এরপর জাপান নিজের চেষ্টায় কিছুদিন যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছিল। তবে ইউরোপের ইতিহাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিজয় দিবস ধরা হয় ৭ মে তারিখকেই। প্রতিবছর তাই এই দিনটার উদযাপনে মেতে ওঠেন ইংল্যান্ড, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশের মানুষ। যুদ্ধের সেনানীদের সম্মান জানানো হয়। তবে এ-বছর করোনা মহামারীর কারণে সমস্ত ধরনের সামাজিক জমায়েত বন্ধ। তাই বিজয় দিবসের উদযাপন হল অনলাইনেই। আর এই উপলক্ষে ইংল্যান্ডের গভর্নমেন্ট কমিউনিকেশন হেডকোয়ার্টারের পক্ষ থেকে আয়োজিত একটি অনলাইন অনুষ্ঠানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করেন ঐতিহাসিক টনি কোমার। তাঁর আলোচনার সুবিধার জন্যই গোয়েন্দা বিভাগের তরফ থেকে তুলে দেওয়া হয় কিছু গোপন নথি। এর মধ্যেই ছিল সেই শেষ বেতার বার্তার তথ্যটিও। এখনও হয়তো যুদ্ধের নানা ইতিহাস চাপা পড়ে আছে গোপন ফাইলের তলায়। ইতিহাসের নানা রোমাঞ্চকর উপাদান হয়তো আবার কোনোদিন প্রকাশ্যে আসবে। অথবা চাপা পড়ে যাবে চিরতরে। এই তথ্যটির কোথাও তো কেউ জানতে চাননি।