বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে ক্রমশ গলছে বরফ। আর এবার দুর্ঘটনার স্বীকার বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো হিমশৈল এ-৭৬। সম্প্রতি ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির স্যাটেলাইটে ধরা পড়েছে হিমশৈলটির ভাঙনের দৃশ্য। আর ঘটনাটি ঘটেছে খোদ আন্টার্কটিকার বুকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই উদ্বিগ্ন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। একে একে আন্টার্কটিকার বরফের গলতে থাকলে পৃথিবীর অবস্থা কী হবে, তা কল্পনা করা সত্যিই দুশ্চিন্তার বিষয়।
গত বছরেই আন্টার্কটিকায় ভাঙন ধরেছিল সেই সময় পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো হিমশৈল এ-৬৮-এর। তার একটা বিরাট অংশ ভাসতে শুরু করেছিল পেরু অভিমুখে। ঘটনাচক্রে কোনো ধরণের সংঘর্ষ ঘটেনি। নাহলে পেরুর পেঙ্গুইন বসতির একটা বড়ো অংশই বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারত। ঠিক বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আবারও ভাঙন এ-৭৬ হিমশৈলে। এবারেও একটা বড়ো অংশ পড়েছে ওয়েডেল সাগরের বুকে। তবে তার আয়তন এখনও নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।
মেরু অঞ্চলে ক্রমাগত বরফ গলনের ঘটনায় একটা বিষয় পরিষ্কার, বিশ্ব উষ্ণায়ন মোকাবিলার জন্য যত উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, তা পর্যাপ্ত নয়। পরিসংখ্যান বলছে, গত ১০ বছরে পৃথিবীর জলস্তরের উচ্চতা বেড়েছে ৯ ইঞ্চি। যার এক চতুর্থাংশের জন্যই দায়ী গ্রিনল্যান্ড এবং আন্টার্কটিকার বরফের গলন। এখনও বেশ কিছু হিমবাহ ও হিমশৈল সংকটের মধ্যে রয়েছে। তার বেশিরভাগই আন্টার্কটিকার ওয়েডেল সাগরের আশেপাশে। হিমবাহগুলি কোনোরকমে টিকে গেলেও প্রতি বছর তার থেকে বিরাট বিরাট বরফের টুকরো এসে মিশছে সমুদ্রের জলে। এভাবে জলস্তর বাড়তে থাকলে আগামী ১০০ বছরের মধ্যে উপকূল অঞ্চলের একটা বড়ো অংশ সমুদ্রের গর্ভে নিমজ্জিত হবে, তাতে সন্দেহ নেই।
এ-৭৬ হিমশৈলের দৈর্ঘ্য ছিল ১৭০ কিলোমিটার, আর প্রস্থ ২৫ কিলোমিটার। এত বড়ো হিমশৈলের মধ্যে ভাঙন উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। ঠিক কত আয়তনের বরফ সমুদ্রে মিশেছে, তার গণনার কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। আর বরফের টুকরো কোনোভাবে স্থলভাগের দিকে এগিয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা, সেটাও পরীক্ষা করে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির গবেষকরা। তবে এবারেও হয়তো বড়ো ধরণের বিপদের হাত থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে। কিন্তু মেরু অঞ্চলের বরফের স্তর বাঁচাতে না পারলে আগামীদিনে মানুষের অস্তিত্বই বিপন্ন হবে।
আরও পড়ুন
আন্টার্কটিকার গভীরে, -২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সন্ধান মিলল নতুন প্রাণীর
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
করোনার প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ল আন্টার্কটিকায়, সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বিজ্ঞানীরা