মানুষের ইতিহাসে বংশতালিকার ইতিহাস অতি প্রাচীন। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত বংশতালিকা বা জিনিয়ালজির প্রচলন খুব বেশিদিনের নয়। গত এক শতক ধরে ধীরে ধীরে জিনবিজ্ঞানের উন্নতি ঘটেছে। আর সেই সূত্র ধরেই এবার বিজ্ঞানীরা তৈরি করে ফেললেন এক আশ্চর্য বংশতালিকা। যাতে প্রায় ১০ হাজার বছর আগের পূর্বপুরুষদেরও হদিশ রয়েছে। এখনও পর্যন্ত বৃহত্তম তো বটেই, বলা ভালো প্রায় সমগ্র মানব সভ্যতার ইতিহাসকেই বর্ণনা করতে পারে এই বংশতালিকা (Family Tree)। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিগ ডেটা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের তৈরি এই তালিকা সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে ‘সায়েন্স’ পত্রিকায়।
আধুনিক মানুষের উৎপত্তি কোথায়? কীভাবেই বা নানা দেশে ছড়িয়ে পড়লেন তাঁরা? আর বিভিন্ন উপজাতির মধ্যে জিনগত পার্থক্যই বা তৈরি হল কীভাবে? এমনই নানা প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর আজও বিজ্ঞানীদের অজানা। এক এক বিজ্ঞানীর রয়েছে এক এক মত। তবে এই তালিকা সেই সমস্ত প্রশ্নেরই উত্তর দিতে পারে বলে আশাবাদী গবেষণার সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানীরা। ডঃ ইয়ান ইয়ং-এর মতে, এই গবেষণার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল এখানে অনুমানের কোনো জায়গা নেই। সম্পূর্ণ তালিকাই তৈরি হয়েছে প্রত্যক্ষ প্রমাণের উপর নির্ভর করে। আর সেখানে অন্তত ৩ হাজার জীবিত মানুষের জেনেটিক তথ্যের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে প্রায় ৩ কোটি পূর্ববর্তী প্রজন্মের মানুষের তথ্য। জিনোম সিকোয়েন্সিং-এর এই ব্যাপক ব্যবহার আগামীদিনে বিজ্ঞানের জগতে পথ দেখাবে।
পৃথিবীর নানা প্রান্তে কোথাও নির্দিষ্ট পরিবারের বংশতালিকা লেখা আছে দীর্ঘদিন ধরে। কোথাও আবার কোনো উপজাতির বংশগতির তালিকা সংরক্ষণ করে রাখা আছে। এছাড়াও বিভিন্ন সমাধিস্থলে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য মানুষের জেনেটিক তথ্য। এই সব তথ্যকে এক জায়গায় জড়ো করার কাজটা নেহাৎ সহজ নয়। সেটাই করে দেখালেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা। শুধুমাত্র মানুষের বংশগতি নিয়ে এই তালিকা তৈরি হলেও এই একই পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে ওরাংওটাং থেকে শুরু করে ব্যাকটেরিয়া, সমস্ত প্রজাতিরই বংশগতির তথ্য তৈরি করা সম্ভব। আগামীদিনে জিনোম সিকোয়েন্সের ক্ষেত্রে তো বটেই, এমনকি জিনঘটিত রোগের চিকিৎসাতেও এই তালিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা দেবেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরাও, পথ দেখাচ্ছে কর্ণাটক