করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক নিয়েই সময় কাটাচ্ছেন পৃথিবীর সমস্ত মানুষ। কিন্তু এর থেকেও বড় আতঙ্কের মধ্যে আছেন আফ্রিকার মানুষ। হ্যাঁ, করোনা ভাইরাসের থেকেও বড় আতঙ্ক, পঙ্গপাল। ভাইরাসকে যেন আর ভয় করেন না তাঁরা। কিন্তু পঙ্গপাল? সে যে মূর্তিমান বিভীষিকার মতো মাঠে মাঠে ছড়িয়ে পড়েছে। এই পতঙ্গের হাত থেকে কি ফসল বাঁচাতে পারবেন তাঁরা? আর না পারলে তো সারা বছর ধরে অনাহারেই দিন কাটাতে হবে। আর এভাবেই ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে হবে মৃত্যুর দিকে।
আজ কিছুদিন হল, পূর্ব আফ্রিকার মাঠে মাঠে নতুন ফসল জন্ম নিয়েছে। সেই ফসল ঘরে তোলার ডাক শুনেছেন উগান্ডা, ইথিওপিয়া, কেনিয়ার মানুষ। আর এর মধ্যেই করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে শুরু হয়েছে লকডাউন। তবে মোটামুটি নিরাপত্তার নিয়মকানুন বজায় রেখেই শুরু হয়েছে ফসল তোলার কাজ। কিন্তু কোনো নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করেই হানা দিয়েছে পঙ্গপালের দল। ২০১৬ সালে আমেরিকা থেকে আফ্রিকায় পৌঁছেছিল এক দল পঙ্গপাল। আর এবারের আততায়ীরা আগের চেয়েও ভয়ঙ্কর। আকারে আগের চেয়েও ২০ শতাংশ বড়ো। এমন বিভীষিকার সামনে দাঁড়িয়ে লকডাউনের কথা কার্যত ভুলেই গিয়েছেন সেখানকার মানুষ। ফলে ভাইরাসের সংক্রমণের সম্ভবনাও বাড়ছে।
আফ্রিকার চাষিদের কাছে বহুদিনের আতঙ্ক পঙ্গপাল। সেই মিশর সভ্যতার সময়েও এই পতঙ্গকে ঘিরে নানা কাহিনির জন্ম হয়েছে। আজও সেই আতঙ্ক মেটেনি। তার মধ্যে বছর চারেক আগে আমেরিকা থেকে এসেছে নতুন প্রজাতির পঙ্গপাল। আর এই নতুন প্রজাতির পঙ্গপাল দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিপুঞ্জের আধিকারিকরাও। যথেষ্ট পরিমাণে কীটনাশক স্প্রে করা গেলে অবশ্য তাদের আটকানো যাবে। কিন্তু আফ্রিকার দেশগুলিতে কীটনাশকের জোগান দেয় মূলত জাপান। করোনা ভাইরাসের জেরে তার আমদানিও প্রায় বন্ধ।
এমন পরিস্থিতিতে মাথায় হাত সরকারেরও। তবে ইথিওপিয়া সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে সরকার। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে ৪ মিলিয়ন ডলারের জরুরি বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে। অথচ পঙ্গপালের আক্রমণে আক্রান্ত ১৮টি দেশের অর্থনীতির অবস্থা রীতিমতো শোচনীয়। তার মধ্যেই কয়েক বিলিয়ন ডলার মূল্যের ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যেই দেখতে দেখতে বর্ষার দিন এগিয়ে আসছে। তখন আবার নতুন সন্তানের জন্ম দেবে পঙ্গপালের দল। তার আগেই কি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন সাধারণ চাষি থেকে কৃষি আধিকারিকরা প্রত্যেকেই।