সকাল থেকেই তাঁর বাড়ির সামনে উপচে পড়ে মানুষের ভিড়। আশেপাশের গ্রাম থেকে অসুস্থ মানুষ এসে অপেক্ষা করে থাকেন। প্রত্যেকেই জানেন, জহিরুদ্দিন আহমেদের কাছ থেকে নিরাশ হয়ে ফিরতে হবে না। আর্তের সেবা করাই তাঁর একমাত্র ধর্ম। ৮৫ বছর বয়সে এসেও নিরলসভাবে সেই কাজ করে চলেছেন বাংলাদেশের মহেন্দ্রনগর এলাকার মুক্তিযোদ্ধা জহিরুদ্দিন।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের প্রথাগত শিক্ষা নেই জহিরুদ্দিনের। পরিবারের রোজগারের উৎস কৃষিকাজ। তবে যেখানে যা ঔষধি গাছের সন্ধান পান, সব সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন জহিরুদ্দিন। বাড়ির বাগান থেকে তা সম্প্রসারিত হয়েছে চাষের ক্ষেত পর্যন্তও। এমনকি গাছ-গাছড়ার অনুসন্ধান করতে নানা জেলায় ঘুরে বেড়ান জহিরুদ্দিন। আর নিজের পরীক্ষা-নীরিক্ষা এবং প্রাচীন পুঁথির সাহায্যে রীতিমতো গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন আয়ুর্বেদশাস্ত্রের বিষয়ে।
তবে আর্তের চিকিৎসাকে কখনোই অর্থনৈতিকভাবে কাজে লাগাননি জহিরুদ্দিন। সামান্য জ্বরজ্বালার চিকিৎসা করেন বিনামূল্যেই। আর কোনো রোগ যদি খুব জটিল হয়, তাহলে তার ওষুধ সংগ্রহ করার খরচটুকু শুধু নিয়ে থাকেন। তবে কোনো রোগী তা দিতে না পারলেও নিরাশ হয়ে ফিরতে হয় না। ইতিমধ্যে ১৫৫টি বিশেষ বিশেষ গাছের ঔষধি গুণ নিয়ে একটি আর্কাইভ তৈরি করে ফেলেছেন জহিরুদ্দিন। আর এই কাজের স্বীকৃতি হিসাবে বাংলাদেশ আয়ুর্বেদ বোর্ড থেকে পেয়েছেন ‘আয়ুর্বেদতীর্থ’ সম্মান।
১৯৩৫ সালে দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম জহিরুদ্দিন আহমেদের। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি দশম শ্রেণীর ছাত্র। সেইসময়েই জড়িয়ে পড়লেন আন্দোলনের সঙ্গে। পড়ে কারমাইকেল কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেছেন। তবে বেশিরভাগ সময়টাই দিয়েছেন বাঙালির অধিকার রক্ষার লড়াইতে। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত চলেছে সেই রাজনৈতিক সংগঠনের কাজ। এর মধ্যেই স্বাধীন হল বাংলাদেশ। কিন্তু দারিদ্র, অপুষ্টি আর চিকিৎসার অভাব মানুষের নিত্যসঙ্গী হয়ে থাকল। অথচ বাংলাদেশের বুকে ঔষধি গাছের সংখ্যা নেহাৎ কম নয়। শুধু অবহেলায় তারা হারিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। জহিরুদ্দিন তাদের সংগ্রহ করে মানুষের চিকিৎসার কাজে লাগাতে শুরু করলেন।
আরও পড়ুন
শব্দ নয়, শিস দিয়েই ভাব বিনিময় করেন তাঁরা; অবলুপ্তির পথে তুরস্কের ‘পাখি ভাষা’
৫০ বছর ধরে কাজ করেও ক্লান্ত হননি জহিরুদ্দিন। এখনও অনেক কিছু করা বাকি বলেই বিশ্বাস করেন তিনি। এমনকি গাছ-গাছড়ার সাহায্যে ক্যানসারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধিও সারিয়ে তোলা সম্ভব বলে বিশ্বাস তাঁর। তবে সেইসব ওষুধ কতদূর ফলপ্রসূ, তা পরীক্ষা করার জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো প্রয়োজন। আজও সেই পরিকাঠামোর জন্য সরকারি অফিসে ঘুরে বেড়ান জহিরুদ্দিন। রাসায়নিক ওষুধের ক্ষতিকর প্রভাবের তুলনায় আয়ুর্বেদিক ওষুধ অনেক বেশি নিরাপদ। মানুষ ক্রমশ সে-কথা বুঝতে পারবে বলেই বিশ্বাস করেন জহিরুদ্দিন। আর তাছাড়া, চিকিৎসাক্ষেত্রকে ব্যবসায়িক স্বার্থমুক্ত করাও যে তাঁর ব্রত।
তথ্যসূত্র - Living the dream of helping others, The Daily Star
আরও পড়ুন
খোদ পশ্চিমবঙ্গেই বিলুপ্তির মুখে এই ১০টি ভাষা, দায়ী বাংলার আধিপত্য
Powered by Froala Editor