এই মহামারীর মধ্যেও লোকে লোকারণ্য কঙ্গোর শহর সাকে। ফুটপাথ, স্কুলবাড়ি, গির্জা উপচে পড়ছে হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে। কিন্তু হঠাৎ এই জনস্রোত কীসের? নতুন করে কি উদ্বাস্তু সমস্যার সম্মুখীন হল কঙ্গো? না। আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা।
এক সপ্তাহ আগের কথা। হঠাৎই বিকট শব্দে কেঁপে উঠেছিল কঙ্গো। বুঝতে অসুবিধা হয়নি ঘুম ভেঙে জেগে উঠেছে আগ্নেয়গিরি মাউন্ট নাইরাগঙ্গো। একদিকে যেমন বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়তে থাকে গোটা অঞ্চলে, তেমনই ম্যাগমার স্রোত গড়িয়ে আসে নিকটবর্তী গোমা শহরে। তাতে প্রাণ যায় বেশ কিছু মানুষেরও। শনিবার সকালে আরও একবার বিপদের পূর্বাভাস দেয় কঙ্গোর সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। আর সেই কারণেই তড়িঘড়ি এলাকার মানুষকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় কঙ্গো প্রশাসন।
কিন্তু বাস্তুচ্যুতদের জন্য আশ্রয় এবং ত্রাণের আশ্বাস দিলেও কোনোরকম পদক্ষেপই নেয়নি কঙ্গোর সরকার। এমনকি উদ্ধারকার্যেও বেশ গাফিলতি ছিল প্রশাসনের, সেই ছবিও স্পষ্ট। আর সরকারের এই গাফিলতিই চরমতম খাদ্যসংকটের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে কঙ্গোকে।
গত বৃহস্পতিবার থেকেই শুরু হয়েছিল এই গণপরিযায়ন। প্রাণ বাঁচাতে গোমা শহর ছেড়ে পালাতে শুরু করেছিলেন বাসিন্দারা। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য তো দূরের কথা, সঙ্গে করে অর্থটুকুও নিয়ে আসতে পারেননি অনেকে। ফলে জোটেনি দানা-পানিটুকুও। শুরুতে বহু মানুষ নিকটবর্তী সাকে শহরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমানে পা রাখার জায়গা নেই সেখানেও। ফলে উত্তর কঙ্গোয় খোলা আকাশের নিচে নদীর ধারেই রাত কাটাচ্ছেন বাস্তুচ্যুতরা। তৃষ্ণা মেটাতে ভরসা এখন নদীর জলই। কিন্তু সেই জলও যে বিষাক্ত হয়ে উঠেছে আগ্নেয়গিরির রোষে। ফলত, ছড়িয়ে পড়ছে ডায়েরিয়ার মতো রোগ।
আরও পড়ুন
চরম দুর্ভিক্ষের শিকার কঙ্গোর এক-তৃতীয়াংশ মানুষ, রিপোর্ট প্রকাশ জাতিসংঘের
ইউনিসেফের রিপোর্ট অনুযায়ী ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অন্ততপক্ষে চার লক্ষ মানুষ। দ্রুত পানীয় জল ও শুকনো খাবার পৌঁছে দিতে না পারলে ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে পরিস্থিতি, জানাচ্ছে জাতিসংঘের এই শাখা সংস্থা। ব্যবস্থাপনার অভাবে কলেরার মতো রোগ অতিমারীর আকার নিতে পারে বলেই সতর্ক করছে তারা। যদিও জাতিসংঘের এই দাবি মানতে নারাজ কঙ্গোর প্রশাসন। তাদের দাবি, গুরুত্ব দিয়েই পর্যালোচনা করা হচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতিকে। রিপোর্টে আক্রান্তের সংখ্যাও দেখানো হয়েছে মাত্র কয়েক হাজার। সরকারের এই নিষ্ক্রিয়তার মধ্যে চরমতম অনিশ্চয়তায় বিপদের প্রহর গুনছেন পূর্ব-কঙ্গোর বাসিন্দারা…
আরও পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্রের ‘মুক্ত খাদ্য অরণ্য’, বিনামূল্যেই পেতে পারেন ফলমূল-সবজি
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
ছিলেন চোরাশিকারি, পরবর্তীকালে নিজের জীবন বিপন্ন করে রক্ষা করেন কঙ্গোর জঙ্গল