ছবি আঁকার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁরা এই তুলি দেখলেই চিনতে পারবেন। ধূসর লোমের এই তুলি গোড়া থেকে সামনের দিকে ক্রমশ গাঢ় হতে হতে একেবারে কালো বিন্দুতে পরিণত হয়। এমন তুলির দাম অনেক বেশি। তবে একেকটি নিখুঁত টানের জন্য এর থেকে উপযোগী তুলি আর হয় না। কিন্তু এই সামান্য একটি তুলির উৎপাদনের জন্য যে নকুল নামের একটি বিপন্ন প্রাণীকে প্রাণ হারাতে হয়, আর সেইসঙ্গে চলে বেআইনি ব্যবসা; সেখবর অবশ্য অনেকেই রাখেন না।
বন্যপ্রাণ বিষয়ক অপরাধ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পখ থেকে গত দুই দশক ধরে নেওয়া হয়েছে ক্লিন-আর্ট প্রকল্প। তুলি তৈরির কাজে যাতে নকুলের লোম ব্যবহার করা না হয়, সেটা নিশ্চিত করাই এই প্রকল্পের কাজ। কিন্তু এর পরেও অপরাধ সেভাবে কমেনি বলে মনে করছেন প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত অফিসাররা। তাঁদের মধ্যে অনেকেই অবশ্য মনে করছেন, ২০০০ সালের শুরুতে ই প্রকল্প শুরু হলেও প্রথম থেকেই গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়নি পুরো বিষয়টা। আর তার ফলেই পরিস্থিতি ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে।
একটি আনুমানিক হিসাব বলছে, ১ কিলোগ্রাম লোমের জন্য ৫০টি নকুল প্রাণ হারায়। আর প্রতি বছর প্রায় ১৫০ কিলোগ্রাম লোমের বেআইনি ব্যবসা চলে। এই হিসাবে অন্তত ১ লক্ষ নকুল প্রাণ হারায় প্রতি বছর। তবে সম্প্রতি প্রশাসন এই বিষয়ে তৎপর হয়ে উঠেছে। গত তিন বছর ধরে প্রতি বছর ১০০ কিলোগ্রামের উপর নকুলের লোম বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনিক কর্তারা মনে করছেন, যতদিন এই তুলির চাহিদা থাকবে ততদিন বেআইনি ব্যবসাও চলতে থাকবে। অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনতে শিল্পীদেরই এগিয়ে আসতে হবে।
অনেক শিল্পী অবশ্য জানাচ্ছেন, এই বিপন্ন প্রাণীটির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে তাঁরা এইধরনের তুলি ব্যবহার বন্ধ করেছেন। পাশাপাশি বিখ্যাত তুলি নির্মাণ সংস্থাগুলিও আর নকুলের লোম ব্যবহার করেন না। কিন্তু এরপরেও কলকাতা, শান্তিনিকেতনের মতো আর্ট-হাবে যত্রতত্র খুঁজে পাওয়া যায় এই বেআইনি তুলি। তাঁদের প্রত্যেককে এই বিষয়ে সচেতন করতে না পারলে আর কিছু বছরের মধ্যেই ছোট্ট এই প্রাণীটির অস্তিত্ব একেবারেই মুছে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রাণী বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন
পেটে বর্শা ঢুকিয়ে হত্যা, আফ্রিকায় মারা গেল বিলুপ্তপ্রায় গরিলা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
করোনা ‘ছড়ানো’র অভিযোগ, ১০০০০ মিঙ্ক হত্যার সিদ্ধান্ত ডাচ সরকারের