“কোভিডের তৃতীয় তরঙ্গ আসছে, আমরা খবরে শুনছি। আক্রান্তের সংখ্যা আবার বাড়ছে, সরকার চিন্তিত। কিন্তু আমাদের এখন এইসব বিষয় নিয়ে চিন্তার অবকাশ নেই। আগে তো কিছু রোজগার করে বাঁচতে হবে।” বলছিলেন কুমারটুলি (Kumartuli) মৃৎশিল্পী সমবায় সমিতির সম্পাদক সুজিত পাল। ২০২০ সালের ভয়াবহ পরিস্থিতি কাটিয়ে এবছর দুর্গাপুজোয় (Durga Puja) ব্যবসা আবার মাথা তুলে দাঁড়াবে বলে আশা করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু বাস্তবে এখনও শিল্পীরা যে তিমিরে ছিলেন, সেই তিমিরেই রয়েছেন। তবে গতবছরের মতো এই বছরে পুজো বন্ধ হওয়ার কোনো আশঙ্কা দেখা যায়নি, এটাই আশার কথা।
সুজিত পাল বলছিলেন, “বাজারে মূর্তির চাহিদা খুব বেশি নেই, এমনটা বললে ভুল হবে। আসলে চাহিদা আছে। কিন্তু আমরা যোগান দিতে পারছি না। কারণ বায়না এসেছে অনেক দেরিতে।” তিনি জানালেন কুমারটুলিতে প্রতিমার জন্য বায়না আসতে শুরু করে পুজোর অন্তত ৬ মাস আগে থেকে। প্রথম পর্যায়ে বেশ কিছু প্রতিমা তৈরি করে দিয়ে অনেক শিল্পী অন্যান্য জেলায় বা রাজ্যে কাজের জন্য চলে যান। কিন্তু এবছর বায়না আসতে শুরু করেছে ১৫ আগস্টের পর থেকে। তখন অনেক শিল্পীই বাইরে চলে গিয়েছেন। আর তাছাড়া ৬ মাসে যত প্রতিমা তৈরি হয়, ২ মাসে তা সম্ভব নয়। তবে এবছরের বিক্রিবাটার হিসাব স্পষ্ট বলতে রাজি হলেন না তিনি। “চাহিদা তো রয়েছেই। আমরা চেষ্টা করছি যতটা যোগান দেওয়া যায়।” এমনটাই জানালেন তিনি।
অন্যদিকে আরেক শিল্পী সনাতন পাল জানালেন, তিনি আগে থেকেই পুজো আয়োজকদের কাছে বায়না নিয়ে রেখেছেন। “আদৌ কতটা বায়না আসবে, তা তো আমরা বুঝতে পারিনি। তাই ছোটো-বড়ো কোনো অর্ডারই ফিরিয়ে দিইনি। এতে হয়তো রোজগার কিছুটা কম হল। কিন্তু প্রতিমা তৈরির জন্য যথেষ্ট সময় হাতে পেলাম।” বলছিলেন তিনি। তাছাড়া আরও একটি সমস্যার কথা বলছিলেন সুজিত পাল। গতবছর অনেক উদ্যোক্তাই ছোটো মূর্তি চেয়েছিলেন। এতে ব্যবসা মার খেয়েছিল ঠিকই, কিন্তু শেষ মুহূর্তে যোগান দেওয়া গিয়েছিল। তবে এর জন্য সমালোচিতও হয়েছিলেন অনেক পুজো উদ্যোক্তা। তাই এবছর তাঁরা আবারও বড়ো প্রতিমা খুঁজছেন। শিল্পী বাবু পাল বলছিলেন, “এর জন্য অবশ্য ২০১৯ সালের সমান মূল্য পাচ্ছি না আমরা। বাজারের অবস্থা প্রায় আগের বছরের মতোই। তাছাড়া জিনিসপত্রের দামও বেড়েছে। কিন্তু তবু কাউকেই ফিরিয়ে দেওয়ার পক্ষপাতি নই আমরা। আর কিছু না হোক, পুজোটা যেন বন্ধ না হয়।” পুজো বন্ধ হলে উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি মার খাবেন শিল্পীরাও। আর সেটা দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে। তাই আপাতত কিছুটা দরদস্তুর করেই চলতে চাইছেন তাঁরা।
শহর কলকাতার বাজার খারাপ হলেও চাহিদা আছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা বেশ কম বলেই জানাচ্ছেন শিল্পীরা। অন্যান্য বছর কুমারটুলি থেকে প্রায় ২০০ প্রতিমা বিদেশে যায়। এবছর সেই সংখ্যাটা ৭০-৮০-তে এসে ঠেকেছে। তবে গতবছরের তুলনায় কুমারটুলির সার্বিক পরিস্থিতি ভালো বলেই জানালেন তাঁরা। বিশেষ করে আগের বছর দুর্গাপুজোই ছিল প্রথম ব্যবসার জায়গা। তার আগের সমস্ত পুজো একেবারে বন্ধ ছিল। এবছর অন্নপূর্ণা এবং গণেশ পুজোয় মোটামুটি মূর্তি বিক্রি হয়েছে। বিশ্বকর্মা পুজোর বায়নাও আসতে শুরু করেছে। ফলে মহামারী পরিস্থিতিতেও ক্রমশ প্রাণ ফিরে পাচ্ছে কুমারটুলি।
আরও পড়ুন
বিসর্জনে কুমোরটুলির সঙ্গে হাতাহাতি, ঘাট থেকে প্রতিমা ফিরিয়ে আনল বাগবাজার সর্বজনীন
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
কমেছে প্রতিমার বায়না, বাজেটও প্রায় তলানিতে; দেবীপক্ষে অসম লড়াই কুমোরটুলির