“প্রতি বছরই বর্ষার সময় হাওড়ার শিল্পাঞ্চলগুলি থেকে দূষিত জল বাইরে ছেড়ে দেওয়া হয়। আর ফ্লাড ড্রেন দিয়ে সেইসব জল প্রবেশ করে গ্রামের মধ্যে। এ-বছর পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। আমাদের গ্রামের চারটে পুকুরের জল সম্পূর্ণ ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে গিয়েছে। পুকুরের সমস্ত মাছ মরে গিয়ে জলের উপরে ভেসে উঠেছে।” বলছিলেন হাওড়া জেলার কুলাই গ্রামের বাসিন্দা, পরিবেশকর্মী সৌরভ প্রকৃতিবাদী। ইতিমধ্যে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য লিখিত আবেদনপত্র পাঠানো হয়েছে প্রশাসনের কাছে।
হাওড়া জেলার পাঁচলা ব্লকে অবস্থিত কুলাই গ্রাম। গ্রামের পাশ দিয়েই চলে গিয়েছে বোম্বে রোড বা ৬ নং ন্যাশানাল হাইওয়ে। সোনালি চতুর্ভজ প্রকল্পের আওতায় রাস্তার পরিধি বাড়ানো হয়েছে। অথচ এখনও শেষ হয়নি পার্শ্ববর্তী নিকাশি ব্যবস্থার কাজ। ইতিমধ্যে গত ১৫ বছরে এলাকাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু ছোটো-বড়ো কারখানা। সৌরভ প্রকৃতিবাদীর কথায়, “কোনো কারখানাতেই পরিবেশ নিয়ম মেনে চলা হয় না। কারখানার তরল বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের বদলে দীর্ঘ সময় জমিয়ে রাখে কারখানাগুলি। তারপর বর্ষা এলেই সেইসমস্ত জল ছেড়ে দেওয়া হয়।” এদিকে সেই দূষিত জল যাতে কারখানার ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে, তাই আশেপাশের কালভার্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু গ্রামের বসতি অঞ্চলের কালভার্ট খোলাই থাকে। সেই কালভার্ট দিয়ে জল গ্রামে ঢুকে পড়ে। এমনকি মানুষের ঘরও ভেসে যায় কারখানার দূষিত জলে।
এবছর সেই দূষিত জলের সঙ্গে এসে মিশেছে ভয়ঙ্কর কোনো রাসায়নিক পদার্থ। সৌরভ জানালেন, “পুকুরের জলের উপরে হলুদ রঙের থকথকে কোনো তেল জাতীয় পদার্থ ভাসছে। মাটির উপরেও লেগে থাকছে আঠালো পদার্থ। পুকুর আর চাষের জমির ক্ষতি তো হচ্ছেই, মানুষের গায়ে লাগলে ভয়ঙ্কর প্রদাহ শুরু হচ্ছে।” গ্রামাঞ্চলের বহু মানুষ দৈনন্দিন কাজের জন্য পুকুরের উপর নির্ভরশীল। অনেকে পুকুরের জলকে পানীয় হিসাবেও ব্যবহার করেন। বিপন্ন গ্রামবাসীরা জানেন না এরপর কী করবেন তাঁরা। কোনোরকমে বাঁধ দিয়ে জল আটকানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু বৃষ্টির তোরে সেই বাঁধও ভেঙে পড়ছে। এই অবস্থায় ন্যাশানাল হাইওয়ে অথরিটির পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, হাওড়া জেলা প্রশাসক এবং পাঁচলার বিডিও-র কাছেও লিখিত আবেদন পাঠিয়েছেন গ্রামবাসীরা। তবে সৌরভের কথায়, “আগেও তো বহুবার মৌখিকভাবে সমস্যার কথা জানানো হয়েছিল। তাতে কেউ কোনো পদক্ষেপ নেননি। এখনও লিখিত আবেদনের কোনো উত্তর পাইনি। এরপর দেখা যাক।”
কারখানার বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা না করা নিয়ে তো অভিযোগ উঠছেই। অন্যদিকে গ্রামবাসীদের প্রশ্ন, ফ্লাড ড্রেনের জল কেন গ্রামের ভিতর এসে পড়বে? এই সমস্যার সমাধানও করতে হবে ন্যাশানাল হাইওয়ে অথরিটিকেই। সৌরভ জানালেন, “ন্যাশানাল হাইওয়ে তৈরির আগে কখনও বৃষ্টির জল গ্রামে এসে জমত না।” যে উন্নয়ন মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে দুর্বিসহ করে তোলে, তার যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন গ্রামবাসীরা।
আরও পড়ুন
ছাইঢাকা গোটা অঞ্চল, এন্নোর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষণে বিপর্যস্ত গ্রামবাসীরা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
ব্যস্ত রাস্তায় গাড়ির সমস্ত দূষণ শুষে নিতে পারে এই উদ্ভিদ!