তিনি, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু-র পরিবারের সদস্যা। শিশিরকুমার বসু-র স্ত্রী। সুগত বসু-র মা। কিন্তু এগুলোই একমাত্র পরিচয় নয় কৃষ্ণা বসু’র। তিনি একইসঙ্গে শিক্ষাবিদ, অধ্যাপিকা, সমাজকর্মী। তাঁর রাজনৈতিক জীবনও বর্ণময়। এবার বার্ধক্যের কাছে হার মানতে হল তাঁকে। কলকাতার বেসরকারি একটি হাসপাতালে আজ সকালে প্রয়াত হলেন তিনি। বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।
অবিভক্ত বাংলার ঢাকায় জন্মেছিলেন। বাবা ছিলেন সাংবিধানিক অধ্যায়ন বিশেষজ্ঞ। পড়াশোনার পরিবেশ পেয়েছিলেন ছোটো থেকেই। বাঙালি চিন্তাবিদ নীরদচন্দ্র চৌধুরীর ভ্রাতুষ্পুত্রী ছিলেন তিনি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর এই উজ্জ্বল ছাত্রীটি ১৯৫৫ সালে বসু পরিবারের গৃহিণী হয়ে আসেন। দুই হাত এক হয়েছিল নেতাজির ভাইপো এবং চিকিৎসক শিশিরকুমার বসু’র সঙ্গে। সেই শিশির বসু, যিনি ১৯৪১ সালে তাঁর কাকা, সুভাষচন্দ্র বসু’কে রাতের অন্ধকারে গাড়ি করে পালাতে সাহায্য করেন।
নিজের তিন সন্তান; দুই ছেলে- সুমন্ত্র, সুগত ও এক মেয়ে শর্মিলা। তিনজনেই কৃতি। এতেই কি থেমে যায় কৃষ্ণা বসু’র পরিচয়? লখনউ থেকে সাম্মানিক সঙ্গীত-বিশারদ ডিগ্রি পেয়েছিলেন তিনি। কলকাতার সিটি কলেজে টানা ৪০ বছর ইংরেজি বিভাগে শিক্ষকতা করেন। একসময় ওই বিভাগেরই প্রধান ও পরে আট বছর সিটি কলেজের প্রধান ছিলেন। শিক্ষাবিদ কৃষ্ণা বসু’র পাশাপাশি উঠে আসে তাঁর রাজনৈতিক জীবনও। যাদবপুর কেন্দ্রের টানা তিনবার সাংসদ ছিলেন তিনি। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যানের ভূমিকাও পালন করতে দেখা গেছে তাঁকে।
সেই সঙ্গে ছিল বসু পরিবারের ইতিহাস রক্ষার দায়িত্ব। অনেক সময় তাঁর বক্তব্য ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্কেরও সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু তাও এলগিন রোডের বাড়ির ইতিহাসকে আগলে রেখেছিলেন। বার্ধক্য এসে যাওয়ার পরেও, এতটুকু ক্লান্তি ছিল না তাঁর। শয্যাশায়ী তো ছিলেনই না। শেষে হৃদযন্ত্রের সমস্যার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে। সেখানেই নিভে গেল জীবনদীপ। চলে গেলেন কৃষ্ণা বসু। শেষ হল বসু পরিবারের একটি অধ্যায়ের।