পৃথিবীতে যেন একটি অঘোষিত বিশ্বযুদ্ধ চলছে। যেখানে একদিকে সমস্ত কাঁটাতার, শত্রুতা তিক্ততা ভুলে এক হয়েছে সব দেশ, অন্যদিকে নিজের মারণ থাবা ক্রমশ জোরালো করছে করোনা ভাইরাস। লাখ লাখ মানুষ মৃত, আক্রান্ত আরও বেশি। এমন পরিস্থিতিতে ভারত, এবং পশ্চিমবঙ্গেও স্কুল কলেজ বন্ধ। সবাই অনলাইন পড়ানোর বন্দোবস্তই করছেন। সেখানে দাঁড়িয়ে ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত নিল পাঠভবন হাইস্কুল। অনলাইন পড়ানো, রোজকার একই রুটিন নয়; তাঁরা জোর দিল এখনকার পরিস্থিতিকে।
আরেকটু খোলসা করা যাক। অনলাইন পড়াশোনার জন্য অত্যাবশ্যকীয় জিনিসটি হল ইন্টারনেট। এবার সব ছাত্রছাত্রীর বাড়িতে ভালো ইন্টারনেট নাও থাকতে পারে। অনেকের অবস্থা তেমন সচ্ছল নয়। তাহলে তারা কি পড়া থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবে? এই চিন্তা থেকেই অনলাইনের রাস্তা থেকে সরে এল পাঠভবন। বদলে যে জিনিসটা নিয়ে এল, সেটা এক কথায় অভূতপূর্ব।
এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে ছাত্রছাত্রীরা নিজের চারিপাশকে আরও ভালোভাবে চিনতে পারছে। করোনার এই ‘ঐতিহাসিক’ মুহূর্তগুলোয় পৃথিবী আমাদের কী চেনাচ্ছে, আমাদের আশেপাশের পরিবেশ, ঘটনা আমাদের কী শেখাচ্ছে— সেটাকে জানাও শিক্ষারই অঙ্গ। আসলে ইতিহাসকে চিনতে শেখা, নিজের সময়কে চিনতে শেখা। ঠিক এই কাজটাই ছাত্রছাত্রীদের করতে বলেছেন পাঠভবনের শিক্ষকরা— সময়ের ডকুমেন্টেশন। কেউ কবিতা, গল্প লিখল; কেউ ছবি আঁকল। কেউ বা মোবাইলে ছবি তুলল; ছোট্ট একটা বিষয় মাথায় রেখে সিনেমা বানাল। মানে যে যেটা পারে, সেইভাবে নিজের চারিপাশকে বলা। যখন স্কুল খুলবে, তখন এই সব কাজগুলি দেখে বিবেচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বাংলায় লেখা দুই পাতার লম্বা চিঠিতে এই জিনিসটাই বলেছেন পাঠভবনের টিচার-ইন-চার্জ শুভা গুপ্ত। এটাই হবে তাঁর পড়ুয়াদের ‘টাস্ক’। শুধু পুঁথিগত বিদ্যা নয়; এখন এর বাইরে গিয়েও নিজেকে যাতে মেলে ধরতে পারে তারা, সেই জন্যই এই উদ্যোগ। তবে দশম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী— এদের জন্য কিছু ক্লাসের আয়োজন করা হয়েছে হোয়াটসঅ্যাপে। তাও খুব দরকার পড়লে। আপাতত এইভাবেই নিজেদের পড়ুয়াদের মেলে ধরতে চাইছে পাঠভবন। অভিভাবক থেকে বিশিষ্টজন— সবাই স্বাগত জানিয়েছেন এই উদ্যোগকে।