দল বেঁধে সিনেমা-থিয়েটার দেখা, ইন্ডাস্ট্রিকে চাঙ্গা করতে তৈরি ‘পাগলের পাঠশালা’

এ এক মজার পাঠাশালা। নাম তার ‘পাগলের পাঠশালা’। কোনো দক্ষিণা লাগে না! সন্ধ্যার পেটপুজোটাও চাঁদা তুলে হয়। কিন্তু যোগ্যতা একটা থাকা তো চাই। আর সেটা হল ‘ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো’! অভিনেতা সপ্তর্ষি রায় বলছিলেন, “কথাটা একটু মজার ছলেই লেখা। আসলে যেটা বলতে চাওয়ার, আমরা নিজেদের স্বার্থে এখানে মিলিত হইনি। আমরা এই সমাজ থেকে, আমাদের এই ইন্ডাস্ট্রি থেকে আমরা তো অনেক কিছুই পেয়েছি, সেটারই একটা রিটার্ন গিফট দিতে এসেছি। অর্থ বা স্বার্থের নিরিখে যাদের জীবন আবর্তিত হয় এ পাঠশালা তাদের জন্য নয়!”

মাসে দু-তিনদিন করে বেহালার একটি বিয়েবাড়িতে বসছে পাঠাশালা। সেটাও বিনামূল্যে! ওই বিয়েবাড়ির মালিক শ্রী সুজয় দাস বিনাস্বার্থে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন! "আমরা তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ৷ টালিগঞ্জের তরুণ শিল্পীদের নিয়ে নিজেদের মতো করে অনুশীলন করছি। কখনও আবার কোনো বিশিষ্ট অভিনেতা বা অভিনেত্রী এসে তালিম দিয়ে যাচ্ছেন। যেমন লাবনী সরকার, কৌশিক ব্যানার্জি ইতিমধ্যেই এসেছেন। শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ভিডিও কনফারেন্সে পাঠশালার সভ্যদের সাথে কথা বলেছেন। সবটাই কিন্তু বিনাপয়সায় ও বিনাস্বার্থে! ভালো ও সৎ কাজ করলে আজও যে কিছু মানুষের সহযোগিতা পাওয়া যায়, এটাই তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ”— বলছিলেন সপ্তর্ষি বাবু। আর এসবেই সঙ্গেই চলেছে নাটক বা থিয়েটার দেখতে যাওয়ার কাজ।

“এই পুজোর সময় একদিন এক ঘরোয়া আড্ডায় বসে পরিকল্পনা হয়, সবে তখন সিনেমা হলগুলো খুলছে, অনেকগুলো নতুন ছবি আসছে, কিন্তু সমস্ত নির্মাতা, নির্দেশকসহ সবার তখন একটাই চিন্তা—দর্শক আসবেন তো?! তখনই আমাদের মনে হলো, আমরাই যদি সিনেমা দেখতে না যাই, তাহলে সাধারণ দর্শকদের উপর দোষ দিই কী করে?” সেই ভাবনা থেকেই শুরু। “এমনিতে শিল্পীরা নিজেদের ইন্ডাস্ট্রির ছবি (যেগুলোতে তাঁরা অভিনয় করেননি) খুব একটা দেখতে যান না! আমরা সেই প্রথাটাই বদলাতে চাইছি।” সপ্তর্ষি বাবু জানালেন, পুজোর সময় প্রথমেই বেছে নিই ‘দুধপিঠের গাছ’। সবাই মিলে দল বেঁধে যাওয়া হল সিনেপলিসে। দিনটা ২১ অক্টোবর। ওখানেই আমাদের সাথে আলাপ করতে এলেন পরিচালক উজ্জ্বল বসু। “আসলে ‘দুধপিঠের গাছ’-যেভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে সেটা আমাকে খুব টেনেছে। আবারও প্রমাণ হলো, ইচ্ছে ও উদ্যোগ সৎ হলে সবকিছুই সম্ভব!” ‘দুধপিঠের গাছ’-এর পরেই পুজোর মধ্যে একে একে ‘চলো পটল তুলি’, ‘শিরোনাম’, ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’ দেখতে যান সবাই। আর সম্প্রতি ২২ নভেম্বর অ্যাকাডেমিতে প্রায় ৩৫ জন মিলে টিকিট কেটে দেখে এলেন চেতনা প্রযোজিত, সুজন মুখার্জী নির্দেশিত নাটক ‘মাগন রাজার পালা’।

তবে শুধু সিনেমা বা নাটক দেখতে যাওয়াতেই অবশ্য এই পাঠশালার কাজ শেষ নয়, বরং শুরু। আগামীতে আরও এমন কিছু কল্যাণমূলক উদ্যোগ নিয়ে পাঠশালা আসছে যাতে শুধু এই ইন্ডাস্ট্রি নয়, পক্ষান্তরে সমাজও উপকৃত হবে৷ তাই তো সপ্তর্ষিবাবু এক কথায় এই পাঠশালার পরিচয় দিতে গিয়ে বললেন, "বাংলার শিল্পীদের মানবিক মঞ্চ!"

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
খড়ের নৌকোয় বহরমপুর থেকে কলকাতা, দুঃসাহসিক অভিযান ১০ বাঙালির