সুদূর মধ্যপ্রাচ্যের দেশ আর্মেনিয়া। কলকাতা থেকে তার দূরত্ব ভূগোলের হিসাবে অনেকটাই। কিন্তু ইতিহাস বলে, দুই দেশের দূরত্ব খুব বেশি নয়। আজও শহর কলকাতার বুকে আর্মেনিয় জাতির টুকরো টুকরো ইতিহাস ছড়িয়ে আছে। আছে আর্মেনিয় গির্জা। মির্জা গালিব স্ট্রিটে গেলেই দেখতে পাওয়া যাবে আর্মেনিয় কলেজ। আর কয়েক মাসের মধ্যেই ২০০ বছরে পা দেবে সেই কলেজ। এই ইতিহাসকেই আবার বর্তমানে ফিরিয়ে নিয়ে এলেন ভারোস বোয়েজিয়ান। কলকাতা থেকে ছুটে গেলেন আর্মেনিয়ায়। কারণ ২ সপ্তাহ হয়ে গেল তার দেশ যুদ্ধে বিধ্বস্ত। সেই যুদ্ধেই সামিল বোয়েজিয়ান।
২৪ বছরের বোয়েজিয়ান জন্মসূত্রে আর্মেনিয়। কিন্তু তাঁর প্রাথমিক জীবন কেটেছে এ-শহরেই। এখানকারই লা-মার্টিনিয়ান স্কুলে এবং পরে আর্মেনিয় কলেজে পড়াশোনা করেছেন তিনি। অবশ্য এরপর নিজের দাদার মতো চেয়েছিলেন আর্মেনিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে। ২ বছরের মিলিটারি ট্রেনিং-ও শেষ। তবে খাতায় কলমে এখনও তাকে আর্মেনিয়ার নাগরিকত্ব দেওয়া হয়নি। কিন্তু মাতৃভূমির টান কি এইসব সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা করে? তাই আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের সংঘর্ষে চুপ করে থাকতে পারেননি বোয়েজিয়ান।
আর্মেনিয়ার নাগরিক না হওয়ায় বোয়েজিয়ানকে এখনও সামরিক বাহিনীতে স্থায়ী সদস্যপদ দেওয়া হয়নি। কিন্তু যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে চলেছেন তিনি। আর্মেনিয়ার রাজধানী ইয়েরেভিয়ানে গিয়ে সরকারি পদস্থ আধিকারিকদের রাজিও করিয়েছেন। তবে স্বেচ্ছাসেবক হিসাবেই আপাতত এই যুদ্ধে অংশ নেবেন তিনি। ১৯৮৯ সাল থেকে যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব দুই দেশকে বারবার যুদ্ধে প্ররোচিত করেছে, সেই দ্বন্দ্বের সঙ্গে এবার জড়িয়ে গেল কলকাতা শহরের নামও। না, সরকারিভাবে ভারত এখনও কোনো দেশকেই সমর্থন জানায়নি। তবে যুদ্ধের পরিস্থিতি যদিকে এগোচ্ছে, তাতে খুব তাড়াতাড়ি নানা দেশকেই এই দ্বন্দ্বের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে হবে বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। তবে ভারোস বোয়েজিয়ান যেভাবে দুই দেশকে মিলিয়ে দিলেন, তাতে রাজনীতির হিসাব নেই। আছে শুধু মানুষে মানুষে সম্পর্কের দীর্ঘ ইতিহাস।
Powered by Froala Editor