বস্তিজীবনের পাশাপাশি পরিবেশ বাঁচাতেও লড়ছেন কলকাতার যুবক

দক্ষিণ কলকাতায় (Kolkata) তিলজলা রোডের ধারে ছোট্ট বস্তি। সেই বস্তি ঘিরে কয়েকটা ঘুপচি ঘর। সেখানেই বাবা-মা এবং দুই দিদির সঙ্গে থাকেন কুনাল দাস (Kunal Das)। কলেজ পড়ুয়া কুনালের জীবন বস্তির আর পাঁচজন ছেলেমেয়ের মতোই আর্থিক সংকটের মধ্যে কাটে। তবে এর মধ্যেও তাঁর অন্য একটি স্বপ্ন রয়েছে। আর সেই স্বপ্ন হল, এই পৃথিবীকে আবার সবুজে ভরিয়ে দেওয়া। পড়াশোনার ফাঁকে তাই সারাদিন ধরে বস্তির শিশু এবং কিশোর কিশোরীদের নিয়েই চলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে প্রচার। নিজে উদ্যোগ নিয়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি নেন। এমনকি সবাইকে সবসময় বলেন, যেখানে সুযোগ পাবে গাছ লাগাবে।

গত ৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন কুনাল। বাবা মহাদেব দাস একটি চামড়ার কারখানায় কাজ করেন। উপার্জন সামান্যই। কিন্তু এর মধ্যেও ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার বিষয়ে কার্পণ্য করেননি তিনি। অবশ্য উচ্চশিক্ষার তিন সন্তানের পড়াশোনার খরচ একসঙ্গে সামলানো তাঁর পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। তাই বেশ কম বয়স থেকেই গৃহশিক্ষকের পেশা শুরু করতে হয় কুনালকে। আর সেখান থেকেই শুরু। শিক্ষকতা যদি করতেই হয়, তাহলে পরিবেশের বাস্তব সমস্যা নিয়েই বা মানুষকে সচেতন করবেন না কেন? এভাবেই বছর পাঁচেক আগে নিজের বস্তির কয়েকজন ছেলেমেয়েকে নিয়েই শুরু করে দেন পরিবেশ সংক্রান্ত পড়াশোনার আড্ডা।

কুনালের মনে পড়ে, ছোটোবেলায় ঠাকুমার কাছে শোনা কিছু কথা। ঠাকুমা বলতেন, তিলজলা বস্তি এলাকায় একসময় অনেক গাছ ছিল। পুকুরে পরিষ্কার জল টলটল করত। এখন পুকুর শুকিয়ে গিয়েছে। গাছেরাও নেই। আর বছর বছর ঘূর্ণিঝড়ে কমবেশি ক্ষতি তো হয়েই চলেছে। সেইসঙ্গে গোটা এলাকাজুড়ে পানীয় জলের অভাব ভয়ঙ্কর চেহারা নিয়েছে। দূষিত জল পান করার ফলে এলাকায় ডায়রিয়া, টাইফয়েডের মতো রোগ লেগেই থাকে। এই সমস্তকিছুর হাত থেকে বাঁচতে গেলে পরিবেশকে বাঁচাতে হবে। এমনটাই বিশ্বাস করেন কুনাল।

তাঁর লাগাতার দাবির কারণেই শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকার খোলা ড্রেনগুলি ঢেকে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটুকুতে প্রকৃত সমস্যার সমাধান হবে না বলেই মনে করেন কুনাল। পরিবেশকে বাঁচাতে সমস্ত মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। সচেতনতা গড়ে তোলার ক্লাস চলছেই। সেইসঙ্গে কয়েকজন ছেলেমেয়েকে নিয়ে একটি নাটকের দলও তৈরি করে ফেলেছেন তিনি। কলকাতা শহরের এবং শহরের বাইরে নানা এলাকায় ঘুরে ঘুরে পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলাই এই দলের উদ্দেশ্য। এখনই সচেতন না হলে পরিস্থিতি সত্যিই হাতের বাইরে বেরিয়ে যাবে। আর তাহলে আর তিন দশকের মধ্যে মানুষের বেঁচে থাকাই অসম্ভব হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা কুনালের। আর তার সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে বস্তি এলাকার দরিদ্র্য পরিবারগুলির উপরেই। তাই সেখান থেকেই লড়াইটা শুরু করেছেন তিনি। তাঁদেরই একজন হয়ে।

আরও পড়ুন
কলকাতায় ছোটো সিনেমার আসরে সেরা সৌম্যদীপের 'এলএসসি'

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
প্রাতিষ্ঠানিকতার বিরুদ্ধে লড়াই, কলকাতার ফুটপাথই গ্যালারি ‘ছবিওয়ালা’-র