তিনদিন-ব্যাপী শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আসর, কলকাতাকে সুরের ঝংকারে ভাসাল ‘নাদ’

একই মঞ্চে হাজির সরোদবাদক পণ্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার, বেহালাবাদক কুমারেশ রাজগোপালন, তবলাবাদক পণ্ডিত বিক্রম ঘোষ। কখনও আবার পণ্ডিত তন্ময় বোসের তবলার সঙ্গে সুরের ঝংকার তুলছে রনু মজুমদারের বাঁশি কিংবা দেবজ্যোতি বসুর সরোদ। বলতে গেলে এ এক অপার্থিব যুগলবন্দি। 

সম্প্রতি এমনই আশ্চর্য এক সঙ্গীতসন্ধ্যার সাক্ষী হল তিলোত্তমা (Kolkata)। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের কিংবদন্তি তারকাদের বিরল যুগলবন্দি মুগ্ধ করল শ্রোতাদের। নেপথ্যে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আসর ‘নাদ’ (Naad)। গত ২৪ থেকে ২৬ মার্চ কলকাতার জিডি বিরলা সভাগৃহে আয়োজিত হয়েছিল তিনদিন ব্যাপী এই বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠান। হাজির হয়েছিলেন পণ্ডিত বিশ্বমোহন ভট্ট, জ্যোতির্ময় রায়চৌধুরী, পণ্ডিত কুমার বোস, হিরন্ময় মিত্র, অরুণাভ মুখোপাধ্যায়, এস শেখর, রনু মজুমদার, বিক্রম ঘোষ, তন্ময় বোসের মতো দেশের নানান প্রান্তের তাবড় শিল্পীরা। 

তবে শুধু যন্ত্রসঙ্গীতই নয়, একইসঙ্গে তাল মিলিয়ে চলেছে নৃত্যানুষ্ঠান। ‘অন্ডাল’ পরিবেশন করেন শিল্পী জয়া শীল এবং তাঁর দল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বাল্মীকি প্রতিভা’ পরিবেশন করেন অলকানন্দা রায়। সবমিলিয়ে তিনদিনের এই অনুষ্ঠান যেন হয়ে উঠেছিল চাঁদের হাট। 

গত বছর কিংবদন্তি তবলাবাদক পণ্ডিত বিক্রম ঘোষ এবং ভারতীয় বিদ্যাভবনের যৌথ উদ্যোগে প্রথমবার আয়োজিত হয়েছিল ‘নাদ’। আসলে কলকাতার সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের সঙ্গে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সম্পর্ক বহু প্রাচীন। তবে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে কেন্দ্র করে নানা অনুষ্ঠান আয়োজিত হলেও, সেখানে সচরাচর খ্যাতনামা শিল্পীদের যুগলবন্দি দেখার সুযোগ পান না সঙ্গীতপ্রেমীরা। আর শূন্যস্থানটাই ভরাট করার লক্ষ্য নিয়েই শুরু হয়েছিল ‘নাদ’-এর পথচলা। লক্ষ্য ছিল, কলকাতার শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ঐতিহ্যকে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দেওয়া। 

বলাই বাহুল্য, শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের দুনিয়ায় এক নতুন ইতিহাস রচনা করেছে ‘নাদ’। গত বছর কানায় কানায় ভর্তি ছিল প্রেক্ষাগৃহ। এমনকি বহু মানুষকে ফিরে যেতে হয়েছিল জায়গার অভাবে। এবারেও অন্যথা হল না তার। তিলোত্তমাবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আবারও প্রমাণ করে দিল, শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের কদর এখনও এতটুকু ম্লান হয়নি মহানগরে…

Powered by Froala Editor

More From Author See More