সুকুমার রায় লিখেছিলেন, ‘আজগুবি নয়, আজগুবি নয়, সত্যিকারের কথা/ ছায়ার সঙ্গে কুস্তি লড়ে গাত্র হলো ব্যথা’। কিন্তু ঠা-ঠা রোদেলা দুপুরেও যদি উধাও হয়ে যায় আপনার ছায়া?
এ-কথা শুনে ভ্রূ-কুঞ্চিত করবেই অনেকেই। এমনটা আবার হতে পারে নাকি? হ্যাঁ, পারে। আর এই বিশেষ মহাজাগতিক ঘটনার বিজ্ঞানীমহলে পরিচিত ‘শ্যাডোলেস ডে’, ‘জিরো শ্যাডো ডে’ বা ‘ছায়াশূন্য দিবস’ (Zero Shadow Day) নামে। আগামী ৫ জুন, সোমবার গোটা কলকাতা শহরের মানুষরাই প্রত্যক্ষ করতে পারবে এই বিরল মহাজাগতিক ঘটনা। কিন্তু রৌদ্রোজ্জ্বল দ্বিপ্রহরে কীভাবে হারিয়ে যেতে পারে শহরের সমস্ত বস্তুর ছায়া?
এর পিছনে লুকিয়ে রয়েছে জ্যোতির্বিজ্ঞান। পৃথিবীর নিজের অক্ষের চারিদিকে ঘুরলেও, এই অক্ষ ২৩.৫ ডিগ্রি কোণে হেলে রয়েছে আবর্তনতলের উল্লম্বের সঙ্গে। ফলে, সূর্যের চারপাশে ঘোরার সময়, বদলে যায় সূর্যের কৌণিক অবস্থানও। কখনও সেটি ২৩.৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে সরাসরি আলোক বিকিরণ করে, কখনও আবার ২৩.৫ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশে। অর্থাৎ, সহজ ভাষায় বলতে গেলে নিরক্ষরেখার দক্ষিণ অবস্থিত মকরক্রান্তি রেখা থেকে উত্তরের কর্কটক্রান্তি রেখার মধ্যেই ঘোরা-ফেরা করে সূর্য। সূর্যের এই কৌণিক অবস্থানের পরিবর্তন আমাদের কাছে পরিচিত উত্তরায়ণ এবং দক্ষিণায়ন নামে।
বছরের কোনো নির্দিষ্ট দিনে সূর্য যে-অঞ্চলে সরাসরি আলোক বিকিরণ করে, অর্থাৎ যে-অঞ্চলের উপর লম্বভাবে অবস্থান করে, সেখানে অবস্থিত যে-কোনো বস্তুর ছায়া প্রত্যক্ষ করা যায় না কয়েক মুহূর্তের জন্য। তাই এই বিশেষ দিনটিকেই অভিহিত করা হয় ছায়াশূন্য দিবস হিসাবে। ঠিক এই হিসেব মেনেই, আগামী ৫ জুন ছায়াশূন্য দিবস প্রত্যক্ষ করা যাবে কলকাতার বুকে। অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া-র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আনুমানিক দুপুর ১১টা বেজে ৩৪ মিনিটে প্রত্যক্ষ করা যাবে এই আশ্চর্য ঘটনা। কলকাতার থেকে কৃষ্ণনগর পর্যন্ত অঞ্চলে প্রত্যক্ষ করা যাবে ছায়াশূন্য দিবস।
তবে শুধু বছরের একটি দিনই নয়, কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তি রেখার মধ্যে অবস্থিত যে-কোনো স্থানেই বছরের দু’দিন প্রত্যক্ষ করা যায় ছায়াশূন্য দিবস। সেই হিসেব মেনে চলতি বছরের শীতকালে, ডিসেম্বর মাসেও ফের ছায়াশূন্য দিবসের সাক্ষী হবে কলকাতা।
Powered by Froala Editor