“বস্তি এলাকায় মহিলারা কীরকম মেনস্ট্রুয়াল হাইজিনের প্র্যাকটিস করে থাকেন, ২০২১ সালে তার ওপর একটা সমীক্ষা করেছিলাম আমরা। স্লাম এরিয়ার যে-সব মেয়েদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, তাঁরা জানান, আলাদা করে তাঁদের বাথরুম নেই। পিরিয়ডের ওই পাঁচদিন কিন্তু তাঁরা বাইরে খোলা বাথরুমে, খোলা চৌবাচ্চায় স্নান করেন। সেখান থেকেই আমাদের মনে হয়েছিল এই বিষয়টার ওপর সচেনতা গড়ে তুলতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন আছে।”
বলছিলেন শিশু অধিকারকর্মী এবং সমাজকর্মী মৌ ভট্টাচার্য। বিগত ২৫ বছর ধরে শিশু সুরক্ষা এবং লিঙ্গ বৈষম্যের ক্ষেত্রে একাধিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে তিনি। পাশাপাশ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘উদ্যমী ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন’-এর (Uddami India Foundation) অন্যতম সদস্য মৌ। বিগত ১৮ বছর ধরে দক্ষিণ কলকাতার এই সংস্থা কাজ করে চলেছে মহিলা-ক্ষমতায়নের। প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ প্রদান করে দিচ্ছে সমাজের প্রান্তিক ছাত্রছাত্রীদের।
এবার এই সংস্থার হাত ধরেই প্রকাশ পেল মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন (Menstrual Health And and Hygiene) সম্পর্কিত একটি বিশেষ পুস্তিকা— ‘ঋতুকালীন স্বাস্থ্য! কি জানব! কেন জানব!’। উল্লেখ্য এই উদ্যোগের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বায়োলজিকস কনসাল্টিং ফার্ম ‘ইনটিগ্রেটেড বায়োফার্মা অ্যান্ড ফার্মা সলিউশন’ এবং সিএসআর।
সদ্য-প্রকাশিত এই পুস্তিকা সম্পর্কে বলতে গিয়েই তিনি তুলে আনছিলেন ২০২১ সালে করা ক্ষেত্র সমীক্ষার কথা। “আমরা যখন মেয়েদের পিরিয়ড সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছি, তখন তাঁরা বলেছেন, এটা নাকি একটা বাজে রক্ত। এটা শরীর থেকে বেরিয়ে গেলে নাকি মেয়েদের শরীরটা ঠিক হয়ে যায়”, বলছিলেন মৌ। ১৬ পাতার ছোট্ট পুস্তিকার দু-মলাটের মধ্যে ধরা রয়েছে ক্ষেত্র সমীক্ষায় উঠে আসা এ-ধরনের একাধিক বাক্যালাপের কথা।
আসলে ‘পিরিয়ড’ বা ঋতুচক্র একুশ শতকে দাঁড়িয়ে সমাজের একটা বড়ো অংশের মানুষের কাছে কেবলই ট্যাবু-মাত্র। বায়োলজিক্যালি একজন মহিলার শরীরের গঠন কেমন, বয়ঃসন্ধিতে মহিলাদের শরীরে কী কী বদল আসে, কেনই বা সেই পরিবর্তন হয় মানবদেহে— এ-সম্পর্ক আজও কোনো সুস্পষ্ট ধারণা নেই অর্থনৈতিক পিরামিডের নিচের তলার থাকা, বিশেষত প্রান্তিক অঞ্চলে মহিলাদের। “সহজ বাংলায় এবং কিছু ছবির মাধ্যমে এই সমস্ত কিছুকে ছোট্ট একটা পুস্তিকায় ধরতে চেয়েছি আমরা”, বলছিলেন মৌ।
বিগত মার্চ মাসের ২৭ তারিখ কলকাতার রোটারি সদনে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ‘উদ্যমী ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন’। হাজির ছিলেন নিবেদিতা মুখোপাধ্যায়, মল্লিকা বড়াল, অর্ণব ঘোষ, সুলগ্না মণ্ডলের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা। বিভিন্নভাবে লিঙ্গবৈষম্যের বিষয়টিকে তুলে আনেন তাঁরা। পিছিয়ে পড়া মহিলাদের সমাজের মূলস্রোতে ফেরা প্রযুক্তিবিদ্যা কী ভূমিকা নিতে পারে আগামীদিনে— তারও সুস্পষ্ট রূপরেখা প্রদান করেন বিশেষজ্ঞরা। সঙ্গে আলোচিত হয় ঋতুসংক্রান্ত স্বাস্থ্যের বিষয়, প্রকাশ পায় ঋতুচক্র ও ঋতকালীন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিশেষ পুস্তিকাটি। পাশাপাশি এদিন সম্মাননা জানানো হয় ৭ জন ইয়ুথ আইকনকে। বলার অপেক্ষা থাকে না, পুরুষতান্ত্রিকতাকে মুছে সাম্যের বার্তা দিচ্ছে ‘উদ্যমী ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন’-এর এই বিশেষ উদ্যোগ। বদল আনার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে সচেতনতাকে হাতিয়ার করে…
Powered by Froala Editor