ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ‘জিঙ্গেল ফেয়ার’, আয়োজক কলকাতার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা

“ফেসবুক কিংবা ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করেন অনেকে। কেউ হয়তো বছর খানেক ধরে জড়িয়ে রয়েছেন এই ধরনের ব্যবসার সঙ্গে। কোনো প্রতিষ্ঠানের বয়স আবার মাত্র কয়েক মাস। এই ধরনের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরই (Small Entrepreneurs) সুযোগ করে দিচ্ছি আমরা”, বলছিলেন দাউদ সূবাশাহ। 

দাউদ কলকাতাভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘লক্ষ্য’-র (Lakshya) ম্যানেজিং ট্রাস্টি। আর এই সংস্থার সৌজন্যে এবার রঙিন হয়ে উঠতে চলেছে ক্রিসমাসের কলকাতা। আগামী ২৬ ডিসেম্বর পার্ক সার্কাসের সেভেন পয়েন্ট মোড়ের ক্রেস্টউড ব্যাঙ্কোয়েট হলে আয়োজিত হতে চলেছে অভিনব এক মেলা। কী নেই সেখানে? কানের দুল, নানারকম সাজ-সজ্জার সরঞ্জাম, পোশাক-আশাক থেকে শুরু করে বিভিন্ন লাইফ-স্টাইল সামগ্রীর বিপুল সম্ভার নিয়ে কলকাতাবাসীর সামনে হাজির হবে ‘জিঙ্গেল ফেয়ার— ফেয়ার ফর এ কস’ (Jingle Fair Fair For A Cause)। 

‘ফেয়ার ফর এ কস’— এই শব্দবন্ধটিতেই ধাক্কা খেতে হয় সকলকে। হ্যাঁ, সাধারণ মানুষকে বিনোদনের রসদ যোগান দেওয়া এই মেলার মূল উদ্দেশ্য নয়। বরং, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং স্বনির্ভরগোষ্ঠীদের ব্যবসা করার একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেই ‘লক্ষ্য’ দাউদদের। “আর সেই কারণেই আমাদের মেলায় ন্যূনতম মূল্যে স্টল পাওয়ার সুযোগ রেখেছি আমরা”, জানালেন দাউদ। 

এখানেই শেষ নয়। ‘জিঙ্গেল ফেয়ার’-এর পিছনে লুকিয়ে রয়েছে আরও একটি ‘ফেয়ার রিসন’। তার আগে অবশ্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘লক্ষ্য’-র কর্মকাণ্ডের সম্পর্কে একটু জেনে নেওয়া দরকার। দরিদ্র কিশোর-কিশোরীদের প্রায় বিনামূল্যে বিভিন্ন ধরনের স্কিল ডেভেলপমেন্ট, পার্সোনাল ডেভেলপমেন্ট এবং হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ দেয় কলকাতার এই সংস্থাটি। লক্ষ্য, তাঁদেরকে স্বনির্ভর করে তোলা। হাওড়ার নবান্নের পাশে ছোট্ট কোচিং রুমেই প্রশিক্ষণ চলে এইসব কিশোর কিশোরীদের।

আরও পড়ুন
দরিদ্র শিশুদের স্বনির্ভর করাই ‘লক্ষ্য’ কলকাতার এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার

আরও পড়ুন
গুটি তোলা থেকে শাড়ি বোনা - রেশম শিল্পে স্বনির্ভরতার আখ্যান গড়ছেন পূর্ণিয়ার মহিলারা

এই সংস্থার অধিকাংশ স্বেচ্ছাসেবকই তরুণ-তরুণী, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী। তাঁদের তত্ত্বাবধানেই চলে এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি। কেউ আবার স্বয়ং অবতীর্ণ হন শিক্ষকের ভূমিকায়। তাছাড়াও কিশোর-কিশোরীদের মননের জন্য বিভিন্ন পেশাদের মোটিভেশনাল স্পিকার এবং মানসিক স্বাস্থ্যকর্মীদেরও হাজির করে ‘লক্ষ্য’। কিন্তু কলেজ পড়ুয়াদের সামর্থ্যই বা কতটুকু? তাই এই গোটা কর্মসূচির খরচের তহবিল জোগাড় করতেই মেলার আয়োজন। “প্রতি বছর আমরা কোনো না কোনো এগজিবিশন করি। আমাদের প্রশিক্ষণকেন্দ্রকে আর্থিকভাবে সাহায্য করে এই প্রদর্শনী। এবারেও সেই একই উদ্দেশ্যে জিঙ্গেল ফেয়ারের কথা চিন্তাভাবনা করেছি আমরা”, জানালেন দাউদ। 

আগামী ২৬ তারিখ, সকাল ১১টা থেকেই খুলে যাবে এই অভিনব মেলার দ্বার। চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিশিষ্ট অতিথি হিসাবে এদিন ‘জিঙ্গেল ফেয়ার’-এ হাজির থাকবেন লেখক তথা সমাজকর্মী সাইরা শাহ হালিম এবং বালিগঞ্জ বিধানসভার বিধায়ক দেবাশিস কুমার। এই মেলার সঙ্গে জুড়ে রইল প্রহর.ইন-ও। 

অস্বীকার করার জায়গা নেই, একদিনের এই মেলা নতুন ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাচ্ছে কলকাতা শহরকে। সদ্য-প্রতিষ্ঠিত স্বনির্ভরগোষ্ঠী কিংবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসার জায়গা করে দেওয়া তো বটেই, ক্ষুদ্র বিপণনের পটভূমি তৈরিতেও এই মেলার গুরুত্ব অপরিসীম। সবমিলিয়ে ‘জিঙ্গল ফেয়ার’ যেন বদল আনার সম্মুখ সমরে নামছে বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে…

Powered by Froala Editor

More From Author See More