ঢাকুরিয়া লেকের কাছে ৩৬/১ সাউথ এন্ড পার্কের বাড়িটির সামনে গিয়ে দাঁড়ালে আজও রোমাঞ্চিত হন অনেকে। বাড়ির ফলকে জ্বলজ্বল করছে দুই কিংবদন্তির নাম। শচীন দেব বর্মণ (Sachin Dev Burman) এবং রাহুল দেব বর্মণ (Rahul Dev Burman)। একসময় এই বাড়িতেই থাকতেন দেব বর্মণ পরিবার। এখান থেকেই পঞ্চমের সঙ্গীতশিক্ষার শুরু। তবে দীর্ঘদিন ধরে অবহেলায় আর অযত্নে পড়ে আছে বাড়িটি। এইবার তা সংস্কারের উদ্যোগ নিল কলকাতা পৌরসংস্থা। সেইসঙ্গে বাড়িটিতে একটি সঙ্গীত জাদুঘর (Music Museum) গড়ে তোলার পরিকল্পনাও চলছে।
গত জানুয়ারিতেই সাউথ এন্ড পার্কের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় সঙ্গীত সরণি। দুই সুরকারের স্মৃতিকে সামনে রেখেই এই নামকরণ করা হয়। আর তখনই পুরসভার চেয়ারপার্সন ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছিলেন ৩৬/১-এর বাড়িটিতে একটি মিউজিয়াম তৈরির পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যেই সেই উদ্যোগ অনেকটা এগিয়েছে বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন ফিরহাদ হাকিম। বর্তমান মালিকের কাছ থেকে বাড়িটি কিনে নিতে চলেছে পুরসভা। আর তাই নিয়ে আলোচনাও শুরু হয়ে গিয়েছে।
হিন্দুস্থান পার্কের একটি ভাড়া বাড়িতে জন্ম হয় আরডি বর্মণের। এর কয়েক বছরের মাথাতেই সাউথ এন্ড পার্কের এই বাড়িটিতে চলে আসে দেব বর্মণ পরিবার। পাশাপাশি দুটি একই চেহারার বাড়ি। একটিতে থাকতেন আরডির মামা অভিজিৎ দাশগুপ্ত। অন্যটিকে সপরিবার শচীনকর্তা। এখানে বসেই নানা গানের সুর দিয়েছেন তিনি। আর সময়ে অসময়ে আলাউদ্দিন খাঁ থেকে শুরু করে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সলিল চৌধুরী, আশা ভোঁসলের মতো শিল্পীর আনাগোনা তো লেগেই থাকত। এখানে বসেই বিখ্যাত ‘টাকডুম টাকডুম বাজাই’ গানটির সুর করেছিলেন শচীনকর্তা। আর সেই গানের রেকর্ডিং-এই পার্কাসন শিল্পী হিসাবে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন রাহুল দেব বর্মণ। বাকিটা ইতিহাস।
১৯৫২ সালে কলকাতার বাস উঠিয়ে মুম্বাই চলে যান এসডি এবং আরডি। সাউথ এন্ড পার্কের এই বাড়িটিতে দুটি পরিবার ভাড়া থাকতে শুরু করেন। তাঁদেরই একজন ১৯৮৬ সালে বাড়িটি কিনে নেন। সেই পরিবারের বর্তমান সদস্য নিশীথ কুমার টোটলার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে কলকাতা পুরসভা। তিনি নিজেও দুই সুরকারের স্মৃতি রক্ষার বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহী। তবে যেহেতু বাড়িটি পারিবারিক মালিকানাধীন, তাই সমস্ত শরিকের সঙ্গে কথা বলে কাজটা শুরু হতে একটু সময় লাগবে বলেই জানিয়েছেন। রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের চেয়ারম্যান শিল্পী শুভাপ্রসন্ন জানিয়েছেন বাড়ির দ্বিতীয় তলায় মিউজিয়াম তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রথম তলায় থাকবে একটি অনুষ্ঠানমঞ্চ এবং শিল্পীদের ঘরোয়া আড্ডার ব্যবস্থা। আপাতত সমস্ত নিয়মকানুন মেনে কবে এই কাজ শেষ হয়, সেদিকেই তাকিয়ে আছে শহরবাসী।
Powered by Froala Editor