নিয়ন্ত্রিতভাবে মেট্রো ও রেল পরিষেবা চালানোর জন্য রেল বোর্ডের কাছে সম্প্রতি দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য সরকার। এবার সেই অনুরোধেই সবুজ সিগনাল দিল কেন্দ্রও। আনলক পর্বের চতুর্থ দফায় আগামী ৭ সেপ্টেম্বর থেকে দীর্ঘ কয়েকমাস পরে কলকাতায় গড়াবে মেট্রো রেলের চাকা। তবে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি মেনেই চলতে হবে মেট্রোয়। তৈরি হবে বিশেষ গাইডলাইনও।
সূত্রের খবর, স্টেশনে প্রবেশের আগে প্রত্যেক যাত্রীর দেহের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হবে। উষ্ণতা বেশি থাকলে অনুমতি দেওয়া হবে না স্টেশনে প্রবেশের। পাশাপাশিই বাধ্যতামূলক করা হবে কর্মীদের মাস্ক ও গ্লাভসের ব্যবহার। ট্রেনে যাতায়াতের সময় ‘সামাজিক দূরত্ব’-এর কথা মাথায় রেখেই একটি কামরায় সর্বোচ্চ ৫০ জন যাত্রীকে উঠতে দেওয়া হতে পারে। অন্যদিকে লোকাল ট্রেনের চালু হওয়া নিয়েও জল্পনা তুঙ্গে। সীমিত সংখ্যক ট্রেন চালু করার কথা ভাবছে রাজ্য সরকার, তা স্পষ্ট হয়ে যায় রাজ্যের সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিঠিতেই। যদিও এ বিষয়ে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানায়নি রাজ্য সরকার।
মেট্রো যেহেতু পৃথক যোগাযোগ মাধ্যম; কেন্দ্রের মতে যাত্রী নিয়ন্ত্রণ করা অনেকটাই সহজ এখানে। কিন্তু এর আগেও বাস, অটো প্রভৃতি যোগাযোগ ব্যবস্থা শুরু করার পর থেকেই দেখা গেছে উপচে পড়া বাদুড়ঝোলা ভিড়। যেমন যাত্রী সংখ্যা বেঁধে দেওয়ার পরেও তার উল্টো ঘটনার সাক্ষী থেকে বাস পরিষেবা। মেট্রোর ক্ষেত্রে কি সত্যিই অন্যথা হবে এই দৃশ্যের? প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে সেই বিষয়ে।
মেট্রো চালু হলে বাস এবং অন্যান্য পরিবহন ব্যবস্থার ওপরে চাপ অনেকটাই কমবে তা যেমন সত্যি, তেমনই উল্টোদিকে সময় বাঁচাতে অধিকাংশ মানুষই ঝুঁকবেন পাতালরেলের দিকে। সেক্ষেত্রে প্রতিটি কামরায় ৫০ জন যাত্রীর সীমা নির্ধারণ করার মতোও পর্যাপ্ত পরিকাঠামো কি আছে রাজ্যের কাছে? যদি ধরেও নেওয়া যায় এই আদর্শ পরিস্থিতির কথা, তাহলেও কি স্টেশনের বাইরে ভিড় জমবে না যাত্রীদের? পর্যায়ক্রমে চালানো মেট্রোর সংখ্যা সামাল দিতে পারবে মানুষের প্রবাহমানতাকে? তা কি আদৌ স্বাস্থ্যকর হবে সাধারণের জন্য?
আরও পড়ুন
অপরিবর্তিত নিট-সহ অন্যান্য পরীক্ষার সূচি, করোনা আবহে কতটা যুক্তিযুক্ত এই সিদ্ধান্ত?
অন্যদিকে, ছাড়পত্র দেওয়া হল ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলি এবং সামাজিক অনুষ্ঠানগুলিকেও। বিয়েবাড়িতে এবার থেকে উপস্থিত থাকতে পারবেন ১০০ জন মানুষ। সেপ্টেম্বরের ২১ তারিখ থেকে চালু হবে থিয়েটার, প্রেক্ষাগৃহগুলি। ২১ সেপ্টেম্বরের পর থেকেই আয়োজন করা যাবে রাজনৈতিক সভাও।
ভারতের বর্তমান আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫ লক্ষ ছাড়িয়েছে। গত ৩ দিনে গড় দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা ৭৫ হাজারের বেশি। শুধু বাংলায় প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছেন প্রায় তিন হাজার মানুষ। ঠিক এই মুহূর্তে উঠিয়ে নেওয়া হচ্ছে কন্টেনমেন্ট জোন ছাড়া অন্য এলাকার লকডাউনও। কোথাও বিশেষভাবে লকডাউন জারি করতে গেলে রাজ্যগুলিকে এবার কেন্দ্রের মতামত নিতে হবে বলেই জানানো হয়েছে। এই ধরণের সিদ্ধান্ত কতটা যুক্তিযুক্ত, সেই ব্যাপারেই থেকে যাচ্ছে ধোঁয়াশা। পাশাপাশি রাজনৈতিক সভা এবং সমাবেশে ছাড় দেওয়ার মধ্যেও কি লুকিয়ে রয়েছে একধরণের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি?
আরও পড়ুন
মহামারীর মধ্যেই গাইডলাইন মেনে হবে নির্বাচন, কমিশনের সিদ্ধান্ত ঘিরে জল্পনা রাজনৈতিক মহলে
লকডাউন শুরুর পাঁচ মাস অতিবাহিত করে এসেও, আজ এই পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে ভারত। সংক্রমণ হারের নিরিখে দেখতে গেলে পৃথিবীর এক নম্বরেই রয়েছে দেশের নাম। আক্রান্তের নিরিখে দেখলে ব্রাজিলের থেকে মাত্র আড়াই লক্ষে পিছিয়ে রয়েছে দেশ। সেই সংক্রমণই কি লাগামছাড়া হয়ে যাবে না এর পরে? আশঙ্কা থেকেই যায়। পাশাপাশি আজকের পরিস্থিতি যেন জানান দিয়ে যায় গত ৫ মাসের লকডাউনের ব্যর্থতাকেই...
(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)
আরও পড়ুন
করোনা সংক্রমণ লাগামহীন রাজ্যে, সাপ্তাহিক দু’দিন লকডাউনের সিদ্ধান্ত কতটা যুক্তিযুক্ত?
Powered by Froala Editor