ঘাতক ছত্রাকের সংক্রমণে আক্রান্ত কলকাতার ব্যক্তি, কী এই ‘প্ল্যান্ট ফাঙ্গাস’?

সংবাদমাধ্যম থেকে সোশ্যাল মিডিয়া— বিগত কয়েকদিন ধরে সর্বত্রই চর্চা চলছে এক ঘাতক ছত্রাককে নিয়ে। ‘প্ল্যান্ট ফ্যাঙ্গাস’। কয়েকদিন আগের কথা। বিশ্বে এই প্রথমবার মানুষের দেহে ধরা পড়ে এই ঘাতক ছত্রাকের উপস্থিতি। আর এই প্যাথোজেনের শিকার হন খোদ কলকাতার এক ব্যক্তি। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় কী এই ‘প্ল্যান্ট ফাঙ্গাস’ (Plant Fungus)?

কনডোস্টেরিয়াম পারপিউরিয়াম। এই বিশেষ ছত্রাক (Fungus) প্রজাতিটি দায়ী এই আশ্চর্য ঘটনার জন্য। সাধারণত ‘ফাঙ্গাস’ বা ছত্রাককে গাছ হিসাবে পরিগণিত করেন না জীববিজ্ঞানীরা। তা সত্ত্বেও এই বিশেষ প্রজাতিকে ‘প্ল্যান্ট ফাঙ্গাস’ নাম দেওয়ার পিছনে লুকিয়ে রয়েছে অন্য কাহিনি। আসলে কনডোস্টেরিয়াম ছত্রাকটি মূলত বাসা বাঁধে গাছের শরীরে। গোলাপ ও গোলাপ গোত্রীয় অন্যান্য ফুল গাছের শরীরে সংক্রমণ দেখা যায় এই প্যাথোজেনের। উদ্ভিদের শরীর থেকেই ক্রমশ শক্তি ও খাদ্য সংগ্রহ করে বেঁচে থাকে এই ছত্রাক। গাছের ক্ষেত্রে এই বিশেষ রোগটিকে বলা হয় ‘সিলভার লিফ’।

তবে এতদিন পর্যন্ত উদ্ভিদ ছাড়া কোনো প্রজাতির প্রাণীর দেহেই এই বিশেষ ছত্রাকের সংক্রমণ ধরা পড়েনি বলেই জানাচ্ছেন গবেষকরা। তবে আকস্মিকভাবেই কেন এই ছত্রাকে আক্রান্ত হলেন কলকাতার এই ব্যক্তি? কীভাবেই বা শনাক্ত করা হল এই ছত্রাককে?

দীর্ঘ তিন মাস ধরেই কাশি, ফ্র্যাইঞ্জাইটিস, ক্লান্তি, গলা ব্যথা এবং অ্যানোরেক্সিয়ার মতো রোগে ভুগছিলেন কলকাতার এই ব্যক্তি। তবে একাধিক পরীক্ষানিরীক্ষার পরেও তাঁর শরীরে চিহ্নিত করা যায়নি কোনো প্যাথোজেনের উপস্থিতি। পরবর্তীতে সিটি স্ক্যানে ধরা পড়ে, ওই ব্যক্তির প্যারাট্রাকিয়াল অ্যাবসেস অর্থাৎ কণ্ঠনালিতে তৈরি হয়েছে ছত্রাকের একটি বিশেষ আস্তরণ। যা শ্বাসগ্রহণে বাধার সৃষ্টি করছে। পাশাপাশি কণ্ঠস্বরের বিকার-সহ একাধিক সমস্যার সূত্রপাতও হচ্ছে এই ছত্রাকের সংক্রমণে।

তবে ছত্রাকটি আদতে কোন প্রজাতির তা চিহ্নিত করতেই তার নমুনা পাঠানো হয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘কোলাবোরেটিং সেন্টার’-র। সেখানেই ধরা পড়ে, আদতে এই ছত্রাক একটি ‘প্ল্যান্ট ফাঙ্গাস’। অর্থাৎ, প্রাণীদের শরীরে তার সংক্রমণ হয়নি ইতিপূর্বে। আর সেই কারণেই প্রথাগত চিকিৎসা পদ্ধতিতে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি এই প্যাথোজেনকে। গবেষকদের অনুমান, আক্রান্ত ব্যক্তি উদ্ভিদ মাইকোলজিস্ট হওয়ায়, তিনি প্রতিদিনই কোনো-না-কোনোভাবে সংস্পর্শে এসেছেন এই ছত্রাকের। সেখান থেকেই ঘটেছে সংক্রমণ। দীর্ঘ দু’বছরের চিকিৎসার ফলে সম্প্রতি তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছেন বলেই দাবি চিকিৎসকদের।

অবশ্য এই ঘটনা আজকের নয়। প্রায় আড়াই বছর আগে ঘাতক এই ছত্রাকের সংক্রমিত হয়েছিলেন তিনি। তবে আসল রোগটিকে চিহ্নিত করা ও প্যাথোজেনের সিকোয়েন্স তৈরির জন্যই লেগে যায় দীর্ঘ সময়। এই আশ্চর্য ঘটনার পর নতুন করে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার পর আগামীদিনে ছত্রাক মানব সভ্যতাকে বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে, ছড়াতে পারে নানান ঘাতক রোগ— মাস ছয়েক আগেই সে-ব্যাপারে সতর্ক করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। প্রকাশ করেছিল এ-ধরনের ঘাতক বেশ কিছু ছত্রাকের তালিকা। সাম্প্রতিক ঘটনা যেন প্রমাণ দিল, আগামীতে সত্যি হতে চলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই আশঙ্কাই…

Powered by Froala Editor