“আমাদের দর্শকদের মধ্যে একটা ধারণা তৈরি হয়ে গিয়েছে যে ২ ঘণ্টা না হলে ঠিক সিনেমা দেখা হল না। শর্ট ফিল্ম তার উপযুক্ত মর্যাদা পায় না। অনেকেই মনে করেন শর্ট ফিল্ম আসলে ফিচার ফিল্মের জন্য হাত পাকাবার একটা জায়গা। দর্শকদের এই মানসিকতাটাই ভাঙতে চাইছি আমরা। দেশবিদেশের নানা শর্ট ফিল্ম তাঁরা দেখুন। আশা করি তাহলে মানসিকতা অনেকটাই বদলাবে।” কলকাতায় ইন্টারন্যাশানাল শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভালের উদ্যোগ নিয়ে বলছিলেন অনুষ্ঠানের কর্ণধার শুভঙ্কর মজুমদার।
মাত্র বছরখানেক আগে পথচলা শুরু করে ইন্ডেপেন্ডেন্ট ফিল্ম সোসাইটি। সিনেমার প্রতি ভালোবাসা থেকেই অনেক মানুষের একসঙ্গে জড়িয়ে পড়া। এর মধ্যে বেশ কিছু স্ক্রিনিং করে ফেলেছেন তাঁরা। আর এবার তাঁদের উদ্যোগেই কলকাতার বুকে শুরু হতে চলেছে ইন্টারন্যাশানাল শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভাল। সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সুদর্শনা চক্রবর্তীর কথায়, “সারা পৃথিবীতে এমন অনেক সিনেমার কাজ হচ্ছে। সবাই হয়তো নিজেদের ছবি ঠিক জায়গায় নিয়ে যেতেও পারছেন না। প্রথমে তাই ভেবেছিলাম কাজটা খুব সহজ হবে না। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল পৃথিবীর প্রায় ৪৭টি দেশ থেকে ছবি এসে পৌঁছেছে আমাদের কাছে। তার মধ্যে থেকে ছবি বাছাই করে নেওয়ার কাজটা সত্যিই কঠিন ছিল।” তবে এবার প্রস্তুতি শেষ। আর মাত্র কিছুদিনের অপেক্ষা। ডিসেম্বরের ১৮ থেকে ২০ তারিখ সোসাইটির নিজস্ব ওয়েবসাইটে অনলাইন স্ক্রিনিং-এর মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে কলকাতা ইন্টারন্যাশানাল শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভাল ২০২০।
তবে শুধু দর্শকের কাছে সিনেমা পৌঁছে দিলেই তো হবে না, সিনেমা তৈরি থেকে তার ডিস্ট্রিবিউশন পর্যন্ত নানাকিছু শেখার আছে। বর্তমান প্রজন্মের পরিচালকদের কাছে সেইসব খুঁটিনাটি হাজির করতেও উদ্যোগী ইন্ডেপেন্ডেন্ট ফিল্ম সোসাইটি। ডিসেম্বরের ১২, ১৩ এবং ১৭ তারিখ জুড়ে তাই আয়োজন করা হয়েছে বেশ কিছু মাস্টারক্লাস এবং ওয়ার্কশপের। আর এখানে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ব্রিটিশ কাউন্সিলের সংস্কৃতি বিভাগও। সঙ্গে থাকছে শর্টস-টিভির মতো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। অনষ্ঠানের প্রতিটি ছবিকে আন্তর্জাতিক বাজারে নিয়ে আসবেন তাঁরা। ফিল্ম প্রোডাকশন এবং ফান্ডিং নিয়ে আলোচনা করবেন সিঙ্গাপুরের শিল্পী অ্যাঞ্জেলিনা মার্লিন। শুভঙ্কর মজুমদারের কথায়, “কলকাতা তো সিনেমার একটা পীঠস্থান। সেখানে দর্শকদের মধ্যে শর্ট ফিল্মকে জনপ্রিয় করার পাশাপাশি পরিচালক এবং নির্মাতাদের এগিয়ে আসতেও হবে।”
অনুষ্ঠানে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন প্রিয়া সিনেমার কর্ণধার অরিজিৎ দত্ত। তাঁর কথায়, “বর্তমানে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শর্ট ফিল্ম একটা প্রতিষ্ঠিত জঁর। তার সঙ্গে বাঙালি দর্শকদের পরিচয় করাতে এমন একটা উদ্যোগ সত্যিই প্রয়োজন ছিল।” তবে এ-বছর সদ্য পথচলা শুরু। তার মধ্যে করোনা পরিস্থিতিতে এখনও বিপর্যস্ত বিনোদন জগত। ইচ্ছা থাকলেও প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারেননি আয়োজকরা। তবে ধীরে ধীরে এই অনুষ্ঠান কলকাতার সারস্বত চর্চার ক্ষেত্রে একটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবে, সে ব্যাপারে আশাবাদী প্রত্যেকেই।
Powered by Froala Editor