ছুটির দিনে অটিস্টিক শিশুদের জন্য কর্মশালা কলকাতা জাদুঘরে

সপ্তাহান্তের ব্যস্ততা কাটিয়ে সোমবার একটু জিরিয়ে নেয় কলকাতা জাদুঘর। সেইসঙ্গে চলে ঐতিহাসিক সামগ্রীগুলির ঝাড়াই-মোছাইয়ের কাজও। তবে আগামীকাল থেকে আর পুরোপুরি বন্ধ থাকবে না জাদুঘর। পর্যটকদের জন্য বন্ধ থাকলেও ছোটো ছোটো শিশুদের জন্য খুলে যাবে ইতিহাসের দরজা। আরও নির্দিষ্টভাবে বললে, বিশেষভাবে সক্ষম সেইসব শিশুদের নিয়ে শুরু হবে কর্মশালা, ডাক্তারি পরিভাষায় যাদের বলা হয় অটিস্টিক শিশু (Autistic Child)। শারীরিক বা মানসিকভাবে তারা সম্পূর্ণ সুস্থ, এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের। শুধু সমাজের প্রচলিত চলনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সমস্যা হয় তাদের। সেইসব শিশুদের কথা মাথায় রেখেই এবার বিশেষ উদ্যোগ নিল কলকাতার ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম (Indian Museum) কর্তৃপক্ষ।

ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামের একটি বড়ো সংগ্রহ হল নানা যুগের শিল্পকর্ম। হাতে আঁকা ছবি তো আছেই। তেমনই রয়েছে নানা ভাস্কর্যও। আর শিল্পের সঙ্গে শিশুদের যোগাযোগ চিরন্তন। বিশেষ করে সমাজের প্রচলিত নিয়মের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারার কারণে অটিস্টিক শিশুদেরও শিল্পের প্রতি বিশেষ আগ্রহ দেখা যায়। সেই আগ্রহকেই তাদের মানসিক তৃপ্তি দেওয়ার কাজে লাগাতে চায় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ। শুধু ছবি বা মূর্তি দেখাই নয়, সেইসঙ্গে সেইসব ছবি খাতার পাতায় ফুটিয়েও তুলবেন শিশুরা। তাদের জন্য যাবতীয় সরঞ্জামের ব্যবস্থা মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষই করবে। যদিও ছবি আঁকার বিষয়ে কোনো কড়া নিয়ম থাকবে না। ইচ্ছে হলে বাড়ি গিয়েও ছবি আঁকতে পারবে তারা। আর সেইসব ছবির মূল্যায়নও করবেন বিচারকরা। তবে তাতে প্রতিযোগিতার কোনো জায়গা থাকবে না।

পাশাপাশি বিভিন্ন প্রত্নসামগ্রীর ৩-ডি অনুকৃতিও তৈরি করা হয়েছে। প্রাচীন প্রত্নসামগ্রী স্পর্শ করে দেখলে নানা বিপদ ঘটে যেতে পারে। কিন্তু শিশুদের, বিশেষত অটিস্টিক শিশুদের স্পর্শ থেকে দূরে রাখাও তাদের মনের মধ্যে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। সেই কথা মাথায় রেখেই এই অনুকৃতির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য সংগঠনের কর্মীরাও প্রশংসা করেছেন এমন উদ্যোগের। কয়েক দশক আগেও অটিস্টিক শিশুদের একরকম ব্রাত্য করেই রাখত সমাজ। এখন পরিস্থিতির সম্পূর্ণ বদল না হলেও কিছুটা সচেতনতা তৈরি হয়েছে। ব্যক্তিগত সচেতনতার পাশাপাশি প্রয়োজন সমষ্টিগত উদ্যোগও। ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামের এই প্রকল্প তেমনই একটি প্রয়াস।

Powered by Froala Editor