১৯৯২ সালেই বিশেষ আইন জারি করেছিল হাইকোর্ট। ঘোষণা করেছিল, বুজিয়ে ফেলা যাবে না জলাভূমি কিংবা জলাশয়। সেই আইন প্রণয়নের ৩ দশক পেরিয়ে যাওয়ার পর, আজও শহর ও শহরতলির বুক থেকে প্রতিনিয়তই হারিয়ে যাচ্ছে কোনো না কোনো জলাভূমি। তৈরি হচ্ছে আবাসন কিংবা কারখানা। ঠিক এভাবেই ধাপা মৌজায় মনঘেরি ভেড়িতে (Bongheri Bheri) রিসর্ট তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল এক বেসরকারি সংস্থা। ২০১৯ সালে বুজিয়ে ফেলা হয়েছিল, পূর্ব-কলকাতার (Kolkata) ২২ একর বিস্তৃত জলাশয়টি। প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন পরিবেশকর্মীরা। দীর্ঘ আইনি লড়াই-এর পর এবার সেই জলাভূমিকে পুনরুদ্ধারের রায় দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৯ সালে সংশ্লিষ্ট জলাশয়টির মালিকানা আদায় করে কলকাতার একটি বেসরকারি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা। রিসর্ট তৈরির জন্য রাতারাতি বুজিয়ে ফেলা হয় গোটা অঞ্চলটিকে। পাশাপাশি তৈরি হয়েছিল খেলার মাঠ। ২০২০ সালে বিষয়টি নজরে আসার পর, স্থানীয় প্রশাসনের কাছে দ্বারস্থ হয়েছিলেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘পিপল ইউনাইটেড ফর বেটার লিভিং ইন ক্যালকাটা’-র পরিবেশকর্মীরা। শুরু হয়েছিল আইনি লড়াই। বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি।
পুরনো নথি জলাশয়ের উপস্থিতির কথা প্রমাণ দিলেও, অঞ্চলটি বুজিয়ে ফেলার দায় অস্বীকার করে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থাটি। সম্প্রতি রাজ্য সরকারের পরিবেশ দফতরের আধিকারিকরা গুগল ম্যাপ ও স্যাটেলাইট ইমেজ-এর মাধ্যমে নিশ্চিত করেন, সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে ২০১৯ সাল পর্যন্ত অস্তিত্ব ছিল ২২ একর জলাশয়ের। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই রায় দিল উচ্চ-আদালত।
সম্প্রতি বিধাননগর মিউনিপ্যাল কর্পোরেশনের উদ্যোগে শুরু হল জলাশয়টির পুনরুদ্ধার প্রকল্প। আদালতের রায়ের সামনে শেষ পর্যন্ত নতিস্বীকার করেছে বেসরকারি সংস্থাটিও। লিখিতভাবে জানানো হয়েছে, পরবর্তীতে মাছ চাষের জন্যই ব্যবহৃত হবে জলাশয়টি।
পরিবেশবিদদের মতে, বিগত দু-দশকে কলকাতার বুক থেকে হারিয়ে গেছে প্রায় ৩০ শতাংশের বেশি জলাশয় ও জলাভূমি। বর্তমানে কলকাতায় অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে মাত্র ১২ হাজার ৫০০ হেক্টর জলাভূমি। যা জৈব বর্জ্যকে শোধন করে প্রাকৃতিকভবে। কমিয়ে আনে নদী দূষণের পরিমাণ। পাশাপাশি জীববৈচিত্র ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় জলাভূমির ভূমিকাও অপরিসীম। সেই নিরিখে দেখতে গেলে জলাভূমি সংরক্ষণে বিশেষ অবদান রাখল পরিবেশকর্মীদের এই আইনি-লড়াই…
Powered by Froala Editor