কলকাতার নিউ মার্কেটে ঢুকতে গেলে, আপনাকে যেতে হবে একটি বিশেষ টানেলের ভিতর দিয়ে। আর সেইসঙ্গে স্প্রিংকলার যন্ত্র থেকে হালকা জলের ছিটা লাগবে শরীরে। করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষার জন্যই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। একে এক অর্থে ঐতিহাসিক বলা যেতে পারে। কারণ কলকাতা শহরে এমন ব্যবস্থা এই প্রথম। ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার বেড়েছে ব্যাপক মাত্রায়। কিন্তু এতে কেবল ছোটো পরিসরে জীবাণু দূরীকরণ সম্ভব। নিউ মার্কেটের মতো একটি ব্যস্ত বাজারের সমস্ত মানুষের সুরক্ষার জন্য এই প্রথম বড় মাত্রায় জীবাণু দূরীকরণের ব্যবস্থা নেওয়া হল।
আপাতত নিউ মার্কেটের একটি গেটে পরীক্ষামূলকভাবে টানেল বসানো হয়েছে। কলকাতা পৌর সংস্থার পক্ষ থেকে এই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এফ. হার্লে কোম্পানির হার্লে সানিকুল শাখাকে। কোম্পানির প্রতিনিধি অপূর্ব কক্কর জানিয়েছেন, তাঁদের এই যন্ত্রটি অন্যান্য যন্ত্রের থেকে একটু আলাদা। কারণ এতে যে রাসায়নিক পদার্থটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট নয়। জীবাণুমুক্ত করার কাজে সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হলেও, এটি মানুষের শরীরের যথেষ্ট ক্ষতি করে। তাই এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে হাইড্রোজেন পারক্সাইডের লঘু দ্রবণ। ফলে এই যন্ত্রটি মানুষের শরীরের তেমন ক্ষতি করবে না। সেইসঙ্গে বিশেষ সেন্সরের ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে অহেতুক রাসায়নিক পদার্থ খরচ না হয়।
পুরসভার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীরাও। সেইসঙ্গে তাঁরা দাবি করেছেন, বাজারের অন্য গেটগুলিতেও যাতে এমন যন্ত্র বসানো হয়। তবে পৌর সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, আপাতত পরীক্ষামূলকভাবেই এই ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। সবদিক বিচার করে যদি দেখা যায় এই যন্ত্র কার্যকরী, তাহলে অবশ্যই সমস্ত গেটে এই যন্ত্র বসানো হবে। সেইসঙ্গে শহরের অন্যান্য ব্যস্ত বাজারেও এমন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তার জন্য কিছুটা সময় দরকার।
এর আগে মুম্বই এবং মাইসোরে এমন জীবাণুমুক্তকারী টানেল বসানো হয়েছে। পুনে শহরে মোবাইল ভ্যানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে সেইসব যন্ত্রে সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট যৌগ ব্যবহার করা হয়েছে। কলকাতার এই যন্ত্রটি সেই তুলনায় যথেষ্ট নিরাপদ, সে-কথা আগেই বলা হয়েছে। তাছাড়া কলকাতায় এমন একটি যন্ত্র শহরবাসীর চাহিদাও পূরণ করেছে। ২১ দিনের লকডাউন প্রায় শেষ হওয়ার মুখে। ব্যস্ত শহরে আবার ভিড় জমে উঠতে বেশি সময় লাগবে না। এমন পরিস্থিতিতে করোনা ভাইরাসের হাত থেকে শহরবাসীকে বাঁচাতে এই যন্ত্র কতটা কার্যকর হয়, সেদিকেই তাকিয়ে আছেন সবাই।