‘আমাদের স্বর্গ নেই, স্যারিডন আছে’। ভাস্কর চক্রবর্তীর বিখ্যাত এই লাইনের আদলে বলতে গেলে, বইপ্রেমীদের কাছে কলকাতা বইমেলাই মহোৎসব। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির জেরে গত বছর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল উৎসবযাপনের সেই সুযোগ। তবে গুঞ্জন উঠেছিল, আগামী বছরে স্বমহিমায় ফিরতে চলেছে বইমেলা (Kolkata International Book Fair)। এবার সেই সুখবরই নিশ্চিত করল রাজ্য সরকার। প্রকাশ করল উৎসবের সূচিও।
আগামী ৩১ জানুয়ারি থেকেই শুরু হতে চলেছে কলকাতা বইমেলা। সোমবার বৈঠকের পর আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার দিনক্ষণ ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঠিক কতদিন চলবে বইয়ের মহোৎসব, সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে এখনও কিছু জানায়নি রাজ্য। তবে জল্পনা ঘনিয়ে উঠছে, ১২ দিন থেকে কমিয়ে ৮ দিন করা হয়েছে বইমেলার সময়সীমা।
“বইমেলা কতদিন চলবে, সেটা এখনও পর্যন্ত আলোচনার স্তরে আছে। বৈঠকের পর আগামী ১২ তারিখে সাংবাদিক সম্মেলনে গিল্ডের পক্ষ থেকে সেটা জানানো হবে। পাশাপাশি মহামারী পরিস্থিতির কথাও মাথায় রেখে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হবে”, বুকসেলার গিল্ডের তরফে প্রহরকে জানালেন ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়। তবে গতবারের মতোই এবারেও সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কেই বসছে বইয়ের আসর। স্থগিত হয়ে যাওয়া ২০২১-এর বইমেলার থিম ছিল বাংলাদেশ। সেই থিমই থাকবে আগামী বইমেলায়।
গত বছর মহামারীর কারণে নির্দিষ্ট সময় থেকে অনেকটাই পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল বইমেলার সূচি। ঠিক হয়েছিল বৃষ্টিমুখর জুলাই মাসেই আয়োজিত হবে বইমেলা। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গের প্রকোপে শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে যায় সেটিও। মধ্যবর্তী সময়ে জেলাস্তরে ছোটোখাটো মেলার আয়োজন হলেও, অনিশ্চয়তা থেকেই গিয়েছিল ২০২২ সালের বইমেলা নিয়ে। ফলে, প্রকাশকদের কাছে রাজ্যের এই ঘোষণা যেন নতুন উপহার হয়েই এল।
আরও পড়ুন
অবশেষে জটমুক্তি, স্থির হল আন্তর্জাতিক বইমেলার সময়
“ব্যবসাগত এবং চারপাশের পরিবেশগত কারণে আমাদের মতো প্রকাশক, লেখক, পাঠকরা প্রত্যেকেই অবসাদের মধ্যে চলে গিয়েছিল। সেটা কাটিয়ে ওঠার জন্য অবশ্যই এটার দরকার ছিল”, বলছিলেন ধানসিড়ি প্রকাশনার সম্পাদক শুভ বন্দ্যোপাধ্যায়। অস্বীকার করার জায়গা নেই বিগত প্রায় দেড় বছরেরও বেশি সময় মহামারীর কারণে এক কথায় প্রায় স্থবির হয়ে গিয়েছিল বইপাড়া। বইমেলার সৌজন্যে সেই খরা কাটবে বলেই আশাবাদী প্রকাশকরা।
আরও পড়ুন
এখনও অনিশ্চিত কলকাতা বইমেলার ভবিষ্যৎ, কী ভাবছেন প্রকাশকরা?
পয়লা বৈশাখ হোক কিংবা দুর্গাপুজো— সারা বছর জুড়েই কমবেশি নতুন বই প্রকাশিত হতে থাকে বইপাড়ায়। কিন্তু তারপরেও বই প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রকাশকদের মূল আকর্ষণের জায়গা বইমেলা। শুধুমাত্র প্রকাশকদের দিক থেকেই নয়, বই কেনা বা বই দেখার ক্ষেত্রে পাঠকদের একটা বড়ো অংশ চেয়ে থাকেন বইমেলার দিকেই। সেখানে দাঁড়িয়ে দেখতে গেলে হাতে আর মাত্র তিনটে মাস। প্রশ্ন থেকে যায়, দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা অনিশ্চয়তার দোলাচল কাটিয়ে কতটা দ্রুততার সঙ্গে প্রকাশনার কাজ গুছিয়ে উঠতে পারবেন প্রকাশকরা?
আরও পড়ুন
কলকাতা বইমেলার প্রবেশদ্বারে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির নকশা, চত্বরজুড়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি!
বোধশব্দ পত্রিকার সম্পাদক সুস্নাত চৌধুরী জানালেন, “বইমেলা হতে পারে বাতাসে এমন একটা খবর তো ছিলই। ফলে, বইপত্র, টাইটেল ইত্যাদির ক্ষেত্রে ভিতরে ভিতরে নিশ্চয়ই তাঁরা প্রস্তুতি নিয়েছেন আগে থেকে। আর এখন পরিস্থিতি যেমন, তাতে অল্প সময়ের সিদ্ধান্তেই আমাদের কাজ করতে হবে। মহামারীর প্রকোপ কখন বাড়বে-কমবে, সেটাও বুঝতে পারা সম্ভব নয়।”
সব মিলিয়ে করোনাকালীন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে বইমেলার এবং সর্বোপরি প্রকাশনার মডেলেও আমূল পরিবর্তন আসতে চলেছে এ-বছরের মেলায়। বইমেলা চিরকালই পাঠক-লেখক-প্রকাশকের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। সেদিক থেকে এবারেও তার প্রত্যাবর্তন বইপ্রেমীদের মধ্যে নতুন করে প্রাণসঞ্চার করবে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো…
Powered by Froala Editor