বন্ধ নয় কলকাতা বইমেলা, একমাস পিছিয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরুর পরিকল্পনা গিল্ডের

বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতিতে এখনও অবধি সমস্ত ধরনের জমায়েত বন্ধ। বাঙালির বারো মাসের তেরো পার্বন বাতিল হয়ে চলেছে একে একে। থমকে গিয়েছে বইয়ের বাজারও। তবে এর মধ্যেই সুখবর, আজকের বাঙালির অন্যতম বড় উৎসব ‘বইমেলা’-র জন্য পরিকল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সময়সূচি বা তার চেহারায় বেশ কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। কিন্তু এখনও অবধি বইমেলার আয়োজনের ব্যাপারে বদ্ধপরিকর গিল্ড। এমন খবরই জানা গিয়েছে।

চলতি বছর ‘কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা’ আয়োজিত হয়েছিল ২৮ জানুয়ারি থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি। এর ঠিক পরে পরেই মার্চ মাস থেকে দেশে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকে। শুরু হয় লকডাউন। করোনার জেরেই মার্চ মাসের প্যারিস বইমেলা বাতিল হয়ে যায়। আর তখন থেকেই দুশ্চিন্তা শুরু হয় আগামী বছরের কলকাতা বইমেলাকে নিয়েও। বহু ছোটো-বড়ো লেখক-প্রকাশকের জীবিকার পাশাপাশি অসংখ্য পুস্তকপ্রেমী বাঙালির আবেগ জড়িয়ে এই মেলার সঙ্গে। এর মধ্যেই আমফানের তাণ্ডবে বইপাড়ার দোকানদার থেকে প্রকাশক সকলেই বিশেষ ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বইমেলা না হলে তাঁদের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়বে। ভেঙে পড়তে পারে বাংলা বইয়ের পুরো বাজারটাই। কিন্তু সমস্ত দুশ্চিন্তার মধ্যেই পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রহরকে জানালেন, “আমরা আশাবাদী আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে প্রস্তাবিত সময়সূচি একমাস পিছিয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে বইমেলা হতে পারে। কিন্তু বইমেলা হবেই, এব্যাপারে আমরা বদ্ধপরিকর।”

তবে আগস্টের শেষে এসেও এখনও করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়নি। নেই কোনো প্রতিষেধক অথবা ওষুধ। এমনকি ভারতে প্রতিদিন বেড়ে চলেছে আক্রান্তের সংখ্যা। কিন্তু ত্রিদিববাবুর কথায়, “সময় যত অল্পই থাক, আমরা কাজ করে ফেলতে পারব। সম্পাদক সুধাংশুশেখর দে-র সঙ্গে এই বিষয়ে কথা হয়েছে। আমরা সবাই দীর্ঘদিন ধরে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই বলতে পারি সময় এখানে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।” আর ইতিমধ্যে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধেও কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা যাবে বলে আশাবাদী তিনি। “করোনাকে হারিয়ে মানুষ আবারও বইমেলায় মেতে উঠবে। ‘করোনাজয়ী বইমেলা’ – এভাবেই ২০২১-এর আয়োজনকে দেখতে চাইছি আমরা।” – প্রহরকে বলছিলেন ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়।

এখনও অবধি চূড়ান্ত কোনো তারিখ স্থির না হলেও, মোটামুটি ২৮ ফেব্রুয়ারিকে লক্ষ্য করে শুরু হয়ে গিয়েছে প্রস্তুতির কাজ। প্রতিবছরের মতো এবছরেও বিদেশের অংশগ্রহণ থাকবে বলে জানিয়েছেন ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়। ২০২১ বইমেলার থিম দেশ বাংলাদেশ। এই উদ্দেশ্যে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৌখিক আমন্ত্রণও জানানো হয়েছে। তিনিও এই অনুষ্ঠান সম্পর্কে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছেন। পাশাপাশি ব্রিটেন, আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া – সমস্ত দেশই কলকাতা বইমেলায় অংশগ্রহণ করবে বলেও জানিয়েছেন ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়। এই বিষয়ে রাজ্য সরকার এবং প্রশাসনের তরফ থেকেও সাহায্যের আশ্বাস পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। “আমাদের সৌভাগ্য যে মুখ্যমন্ত্রী নিজেও বইমেলার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত এবং এর তাৎপর্য তিনি বুঝতে পারছেন।” তবে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও কিছু সরকারি নিয়ম ও স্বাস্থ্যবিধি তখনও জারি থাকতে পারে। সেইসব সম্বন্ধে আরও ভালভাবে নিশ্চিত না হয়ে এখনই চূড়ান্ত পরিকল্পনা করে ফেলা সম্ভব নয়। কিন্তু এখনও যে বইমেলার জন্য প্রস্তুতি ভিতরে ভিতরে জারি রয়েছে, হতাশার পরিবেশে বইপ্রেমী বাঙালির কাছে এটুকুই আনন্দের খবর।

আরও পড়ুন
দু-বাংলার সেতু হয়ে হাজির প্রহর, একুশে বইমেলার আড্ডায় জয়ী হল ভাষাই

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
তাঁর বই স্টলে রাখুক কেউ, অনুরোধ নিয়ে বইমেলায় ঘুরছেন বৃদ্ধ বাঙালি বিজ্ঞানী

More From Author See More