তাকিয়ায় গা এলিয়ে দিয়ে বসে আছেন উৎপল দত্ত। না না, উৎপল দত্ত নন। তিনি মগনলাল মেঘরাজ। ফেলুদার (Feluda) জীবনের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ খলনায়ক। অথবা মুকুলের পিছনে দাঁড়িয়ে ডঃ হাজরা বলছেন ‘ওই দ্যাখো সোনার কেল্লা!’ এইসব দৃশ্য চোখ বন্ধ করে মনে করতে পারেন যে কোনো বাঙালিই। আর সেইসব দৃশ্যকেই খাতায় কলমে ফুটিয়ে তুলছেন কলকাতার শিল্পী করিশমা সিদ্দিক রায় (Karishma Siddique Roy)। গল্পের ফেলুদা নন, বরং চলচ্চিত্রের ফেলুদা এবং অন্যান্য চরিত্রগুলোকেই ফুটিয়ে তুলছেন তিনি। আর তাও মাত্র সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দুটি সিনেমা থেকে। ‘সোনার কেল্লা’ এবং ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’। যে দুটি সিনেমাতে ফেলুদার চরিত্রে দেখা গিয়েছে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে।
ছবি আঁকা কখনও শেখেননি করিশমা। পেশাগতভাবে তিনি শিল্পী নন। বরং রেডিও জকি থেকে বাণিজ্যিক সংস্থার ম্যানেজমেন্ট পর্যন্ত নানা বিষয়ে পেশাগত অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। তবে ছবি আঁকার বিষয়টা জড়িয়ে রয়েছে একেবারে ছেলেবেলার সঙ্গে। বছর দুয়েক বয়স তখন, কাগজ-পেনসিল নিয়ে বসে পড়তেন বারবার। সামনে যা দেখতেন, সেইসবের ছবি আঁকার চেষ্টা করতেন। সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ছিল জীবন্ত মানুষের মুখ আঁকতে। কাঁচা হাতের সেইসব ছবি দেখে অনেকেই হাসতেন। তবে করিশমার বাবা বরাবর উৎসাহ দিয়ে গিয়েছেন মেয়েকে। এরপর পড়াশোনা এবং পরবর্তীকালে পেশাগত কারণে আর ছবি আঁকা হয়নি।
গতবছর করোনায় প্রাণ হারান করিশমার শ্বশুর। শ্বশুরের মৃত্যুতে মানসিকভাবে বেশ ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। সেই সময়েই স্বামী ম্যান্ডোলিনবাদক দীপ্তাংশু রায়ের সংগ্রহে থাকা পুরনো সব ফাউন্টেন পেন নিয়ে বসে পড়লেন করিশমা। ধীরে ধীরে যেন সেই ছেলেবেলায় ফিরে যেতে শুরু করলেন। একটু একটু করে খাতার পাতায় ফুটে উঠতে থাকল নানা ছবি। এর মধ্যেই গত ২ মে সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষ পূর্ণ হল। সেদিনই বসে থাকতে থাকতে মগনলাল মেঘরাজের ছবিটি এঁকে ফেললেন। আর সামাজিক মাধ্যমে বেশ জনপ্রিয়ও হল ছবিটি। তারপর একে একে জটায়ু, তোপসে, মুকুল, ডঃ হাজরা… হ্যান্ডমেড পেপারের পাতায় জীবন্ত হয়ে উঠতে শুরু করলেন প্রত্যেকেই।
প্রতিটা ছবিই করিশমা আঁকেন ফাউন্টেন পেনের সাহায্যে এবং হ্যান্ডমেড কাগজের উপরে। তাঁর দাদু ছিলেন স্বদেশি আন্দোলনের কর্মী। স্বদেশি কালির ব্র্যান্ড ‘সুলেখা’-র অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন তিনি। ফাউন্টেন পেনের সঙ্গে তাই অন্য এক আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে করিশমার। সম্প্রতি নতুন করে বাজারে এসেছে সুলেখা কালি। আর তার প্যাকেটের গায়ে শহিদ ক্ষুদিরাম বসুর যে ছবিটি রয়েছে, সেটিও করিশমারই আঁকা। তবে এখনও শিল্পকে পেশা হিসাবে বেছে নিতে রাজি নন করিশমা। বরং মনের দুঃখ যন্ত্রণা ভুলতেই বারবার ফিরে আসা তার কাছে।
আরও পড়ুন
অসমাপ্ত ফেলুদার রহস্য
তথ্যসূত্রঃ Self-taught artist brings Satyajit Ray's Feluda films alive, Pooja Mitra, My Kolkata, The Telegraph Online
আরও পড়ুন
ফেলুদার শহরে শার্লক হোমসের ঠেক; ঢুঁ মারতেন সুকুমার সেন, প্রেমেন্দ্র মিত্র, নীরেন্দ্রনাথ, সমরেশ বসুরা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
প্রদোষ ‘মিত্র’ নয়, ফেলুদা-র পদবি ‘দত্ত’ ভেবেছিলেন সত্যজিৎ!