২০১৯ সালের শেষ পর্যায় সেটা। চিনে ছড়িয়ে পড়েছিল এক নতুন মারণ ভাইরাসের আতঙ্ক। তবে সেই ভাইরাস যে অল্পদিনের মধ্যেই গোটা পৃথিবীর ত্রাস হয়ে উঠবে, বোঝা যায়নি তখনও। হ্যাঁ, না বললেও চলে, কোভিডের (Covid) কথাই হচ্ছে। দেড় বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে এসে আজও অব্যাহত তার প্রকোপ। গণ-ভ্যাকসিনেশন করোনার সংক্রমণ খানিকটা ঠেকালেও, আজও নিয়মিত বদলে চলেছে কোভিডের চিকিৎসা পদ্ধতি। এবার কোভিড প্রতিরোধে নয়া ওষুধের (Medicine) সন্ধান দিলেন একদল ভারতীয় বিজ্ঞানী।
না, একেবারে নতুন ওষুধ নয়। বরং, বলা যেতে পারে এই কোভিড-মারণাস্ত্রের সঙ্গে বিগত দেড় বছরে সকলেই পরিচিত হয়ে গেছি আমরা। তবে এতদিন তাঁকে যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে সম্পূর্ণ কার্যক্ষমতায় কাজ করতে পারেনি সেই ওষুধ। সোরাফেনিব এবং রেমডিসিভির। এই দুটি ড্রাগের যৌথ ব্যবহারেই বাজিমাত করলেন ভারতীয় গবেষকরা। ৫:১ অনুপাতে এই ওষুধ দুটিকে মিশিয়ে ব্যবহার করলে করোনা চিকিৎসায় দ্রুত ফলাফল মিলছে বলেই দাবি তাঁদের।
যদিও গবেষণার মূল লক্ষ্য ছিল করোনাভাইরাসের চরিত্রের অজানা দিকগুলির বিশ্লেষণ। বায়োইনফরম্যাটিক্স, বায়োকেমিক্যাল এবং মাস স্পেকট্রোস্কোপির মাধ্যমে করোনাভাইরাসের আরএনএ নির্ভর নিউক্লিওটাইড ট্রান্সফার ডোমেন বা ‘নিরান’-কেই মূলত চিহ্নিত করেছেন ভারতীয় গবেষকরা। এই পদ্ধতিতে প্রাপ্ত বর্ণালির বিশ্লেষণ করেই উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ক্যানসাররোধী কিংবা বাইক্রোবায়াল ওষুধের ব্যবহারই নষ্ট করে দিতে পারে কোভিডের কারণে সৃষ্টি হওয়া কাইনেজকে। গবেষকরা জানাচ্ছেন, আরএনএ ভাইরাসের জীবনচক্র সম্পূর্ণ হওয়ার জন্য ‘নিরান’-এর গুরুত্ব অপরিসীম। এই পর্যায়েই ভাইরাসের ‘আরডি-আরএন’ কণাগুলিকে ভেঙে ফেলতে পারলে সফলভাবে রুখে দেওয়া যাবে মানবদেহে তার বিস্তার।
গবেষণায় যুক্ত ছিলেন দিল্লির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইমিউনোলজির গবেষক অভিষেক দ্বিভেন্দি, রিচার্ড মারিয়াডেজ, মহম্মদ আহমেদ, সায়ন চক্রবর্তী, দীপশিখা কর, সতীশ তিওয়ারি, তন্ময় মজুমদার, শঙ্কর ভট্টাচার্য, সুদীপা সোনার প্রমুখ, শৈলেন্দ্র মণি প্রমুখ। যার মধ্যে রয়েছে একগুচ্ছ বাঙালি মুখ। সম্প্রতি ‘প্লস কম্পিউটেশনাল বায়োলজি’ বিজ্ঞান জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণাপত্রটি। ভারতীয় গবেষকদের এই নতুন আবিষ্কার আগামীদিনে কোভিড মোকাবিলায় যে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠতে চলেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না…
Powered by Froala Editor