ধরুন, রেস্তোরাঁয় গেলেন আর আপনার সামনে পরিবেশন করা হল পান্তা ভাত ও আলু সেদ্ধ। নিশ্চয়ই ফেটে পড়বেন রাগে? তেমনটাই স্বাভাবিক। এহেন খাবার আধুনিকতার সঙ্গে সত্যিই যে বেমানান। তাই খানিক তাচ্ছিল্যের নজরেই তাকে দেখে আজকালকার বাঙালিরা। বরং, নজর থাকে ইটালিয়ান, চাইনিজ কিংবা ফরাসি রেসিপির দিকেই। কিন্তু এই উপেক্ষিত পদকেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে উপস্থাপন করে বিশ্বসেরা হলেন এক বঙ্গতনয়া। বাংলা ভাষার পাশাপাশি এবার বৈশ্বিক স্তরে সমাদৃত হল ‘বাঙালিয়ানা’-র স্বাদও।
কিশোয়ার চৌধুরী। বাংলাদেশের বংশোদ্ভূত ৩৮ বছরের মহিলাই এবার রন্ধন প্রতিযোগিতা 'মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়া'য় তৃতীয় হহলেন। আর এই গোটা রিয়েলিটি শো জুড়েই বার বার তাঁর হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল বাঙালির চিরন্তন রন্ধন পদ। কখনো খিচুড়ি-বেগুন ভর্তা, চটপটি, ফুচকা, আবার কখনো হাঁসের মাংস, মরিচ লাউ কিংবা মিষ্টি— একাধিক বাঙালি খাবারে তিনি মন মাতিয়েছেন বিচারকদের। সেইসঙ্গে জিতে নিয়েছেন আপামর বাঙালির হৃদয়ও।
গতকাল প্রতিযোগিতার ফাইনালে তাঁর রেসিপি ছিল ‘স্মোকড ওয়াটার রাইস, আলু ভর্তা ও সার্ডিন’। যা আদতেই পান্তা ভাত, আলু সেদ্ধ এবং মাছ ভাজা। আর তার স্বাদেই বোল্ড আউট হলেন বিচারকরা। ফাইনালের প্রথম পর্বে তিন বিচারকের থেকেই ১০-এ ১০ পেয়েছিলেন কিশোয়ার। তবে দ্বিতীয় পর্বে অল্পের জন্য পিছিয়ে পড়েন তিনি। মাত্র দু’পয়েন্টের জন্য হাতছাড়া হয় দ্বিতীয় স্থান। অন্যদিকে এই প্রতিযোগিতায় প্রথম হন জাস্টিন নারায়ণ। তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত।
কিশোয়ারের জন্ম অস্ট্রেলিয়ায় হলেও বাংলার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল অটুট। বাবা ছিলেন ঢাকার বিক্রমপুরের বাসিন্দা। মায়ের বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে। কর্মসূত্রে পঞ্চাশ বছর আগে দেশ ছেড়েছিলেন দু’জনেই। পরিণয় হয় অস্ট্রেলিয়াতে। তবে বিদেশে থাকলেও সর্বাঙ্গেই বাঙালিয়ানার ছাপ এখনও অটুট তাঁদের মধ্যে। সেই ছাপ রয়ে গেছে কিশোয়ারের জীবনেও। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় বাবা-মায়ের প্রিন্টিং-এর ব্যবসাই দেখভাল করেন কিশোয়ার।
আরও পড়ুন
টেনিসে পিছিয়ে নেই বাঙালিরাও, আন্তর্জাতিক স্তরে দাপট দেখিয়েছেন অনেকেই
অস্ট্রেলিয়ায় তো বটেই, এমনকি দুই বঙ্গের আধুনিক রেস্তোরাঁতেই বাঙালি পদের দেখা পাওয়া ভার। অন্যদিকে পরিচিতদের মধ্যেও বাঙালি পদের প্রতি অনীহা নজর কেড়েছিল। যা বেশ আহতই করেছিল কিশোয়ারকে। আর তারপরই সিদ্ধান্ত নেন, বিশ্বের মঞ্চে তুলে ধরবেন বাঙালির চিরন্তন পদ। সেই সুযোগটাই তাঁকে এনে দেয় অস্ট্রেলিয়ান মাস্টারসেফের ত্রয়োদশ সিজন। তবে একেবারে ফাইনাল পর্যন্ত যে পৌঁছে যাবেন তিনি, তা স্বপ্নেও ভাবেননি কিশোয়ার। তবে বাংলার সংস্কৃতি ও বাঙালি খাদ্যের স্বাদেই যেন জাদু খেলে যায়। পুরস্কার পাওয়ার থেকেও, আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলার পদের সমাদর পাওয়াতেই যেন বেশি আপ্লুত তিনি। কে বলতে পারে, হয়তো আগামী দিনে তাঁর দৌলতেই বিদেশি রেস্তোরাঁগুলোতে ধুম পড়ে যাবে না বাঙালি খাবারের জন্য?
আরও পড়ুন
উইম্বলডনে দাপট বাঙালি তরুণের, জুনিয়ার্সের সেমিফাইনালে সমীর বন্দ্যোপাধ্যায়
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
দ্য ফ্যামিলি ম্যান-২ ও বাঙালি প্রধানমন্ত্রী : সত্য ও সম্ভাবনার দুটি দিক