কাঁটাতার এক বিষম বস্তু। এক লহমায় কত লোকের ঠিকানা আলাদা করে দেয়। কিন্তু আত্মা কি আলাদা করতে পারে? পশ্চিমবঙ্গ আর বাংলাদেশ— ভাষা, সাহিত্য, শিল্প, সংস্কৃতি সমস্ত দিক দিয়ে আজও জড়িয়ে রয়েছে একে ওপরের সঙ্গে। সেই সঙ্গে সেখানে ফুটে রয়েছে ভাগাভাগির স্মৃতিও। কোথাও মানুষের মধ্যে, কোথাও বাড়ি-ঘরের মধ্যে, কোথাও স্রেফ নামে। কলকাতার হাতিবাগান চত্বরে বেশ মন দিয়ে ঘোরাঘুরি করলে এই কথাটা হয়ত মনে হবে আপনার। যেখানে শুধু এপার বাংলা নয়, স্ব-নামে হাজির রয়েছে ঢাকা, বিক্রমপুর, খুলনা।
বাস এসে থামল হাতিবাগানে মিত্রা সিনেমা হলের সামনে। বন্ধ সিঙ্গল স্ক্রিনের দুঃখ পেরিয়ে একটু এগোলেই সিটি মার্ট। তার আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পুরনো, নতুন সব দোকান, হকার স্টল। সেই সবের মাঝখান দিয়েই চোখে পড়ল একটি নাম। ‘খুলনা বস্ত্রালয়’। একতলা দোকান, সামনে বসে আছেন এক প্রৌঢ় ব্যক্তি। ভেতরে গদির ওপর বসে আছেন কর্মীরা। দুপুরবেলায় সামান্য আয়েস করে নেওয়া আর কি!
লেখার শুরুতেই যে বলা হয়েছিল, কিছু সম্পর্ক এখনও শুধু নামেই টিকে আছে। ক্যাশ কাউন্টারে বসে প্রায় সেরকমই বললেন মৃন্ময় সাহা। এই দোকানের তৃতীয় প্রজন্ম তিনি। তাঁর দাদু, স্বর্গীয় এম বি সাহা ১৯৭০ সালে হাতিবাগানে তৈরি করেছিলেন এই দোকান। দেশভাগের পর, খুলনা ছেড়ে চলে আসেন এই বাংলায়। সেটা ১৯৬০-এর কাছাকাছি সময়, খানিক আগেই হবে। নিজের পুরনো জায়গার নামেই দোকানের নাম রাখলেন ‘খুলনা বস্ত্রালয়’। বলা ভালো, স্মৃতি ধরে রাখার একটা সামান্য চেষ্টা।
হ্যাঁ, চেষ্টাই বটে। কারণ খুলনা, বা ওপার বাংলার সঙ্গে আর কোলো সম্পর্কই অবশিষ্ট নেই এদের। শাড়িও তৈরি হয় এখানকার কারিগরদের দিয়ে। আগেও তা-ই হত। শুধু, নামটি থেকে গেছে। একইরকম।
এরকম আরও দোকান ছড়িয়ে আছে হাতিবাগানের আশেপাশে। শুধু নামের মধ্যে দিয়েই সামান্য হলেও পূর্বপুরুষের স্মৃতি ধরে রাখা। দুই বাংলার সম্পর্ক ধরে রাখা, যতই সেটা নামে হোক না কেন।