‘ভারতবর্ষে বাচা খানের সম্মান বড় কম না। কিন্তু বাঙালিদের মধ্যে তাঁর কদর হয়তো সবথেকে বেশি।’
বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশন থেকে কয়েকশো গজ এগিয়েই করিম মুস্তাফা লেন। একটা ছোট্ট মসজিদের পাশে প্রায় সাতমহলা বাড়ি। বাড়ির নিচের তলায় ছিমছাম অফিসঘর। দেওয়ালে ঝুলছে সীমান্ত গান্ধীর ছবি। হ্যাঁ, খান আব্দুল গফফার খান (Khan Abdul Gaffar Khan) বা বাচা খানের শেষ কীর্তিটি লুকিয়ে পার্ক সার্কাসের এই অন্ধগলির মধ্যে। তাঁর দেখানো পাশতুনিস্তানের (Pashtunistan) স্বপ্ন পাথেয় করে চলেছেন ইয়াসমিন নিগর খান (Yashmin Nigar Khan)। সম্পর্কে যিনি বাচা খানের মানসপৌত্রী। এবং বর্তমানে অল ইন্ডিয়া পাখতুন জিগরা-ই-হিন্দের সঞ্চালক। এই সংগঠন সম্পূর্ণ গোপনভাবে তৈরি করে গিয়েছিলেন বাচা খান।
দেশভাগের যন্ত্রণা বুকে পাকিস্তানে ফিরে শুরু করেছিলেন নতুন লড়াই। স্বাধীন পাশতুনিস্তানের লড়াই। চেয়েছিলেন, আফগানিস্তান বেলুচিস্তানের মানুষ স্বতন্ত্রতা পাক। এই নতুন দেশের নাম হোক পাশতুনিস্তান। যে মাটি থেকে উঠে এসেছিল হাজার হাজার খুদাই-খিদমতগারের সংগ্রামীরা, সেই মাটি তাদের আপন হোক।
তবে বাচা খান জানতেন তিনি পাকিস্তান সরকারের নেক-নজরে নেই। তাঁর অতিরিক্ত ভারতপ্রীতি তৎকালীন সরকার মোটেই সহ্য করেনি। ১৯৪৮ সালে প্রথমবার গ্রেপ্তার হন সীমান্ত গান্ধী। বুঝতে পারছিলেন এভাবে আন্দোলন চলতে পারবে না বেশিদিন। ফলে জেল থেকে বেরিয়ে সটান চলে আসেন কলকাতা। এরপর সেখানে সীমান্ত গান্ধীর মানসপুত্র লালাজান খানের হাতেই গড়ে ওঠে অল ইন্ডিয়া পাখতুন জিগরা-ই-হিন্দ।
আরও পড়ুন
আফগানিস্তানের এলজিবিটি সম্প্রদায়ের জন্য লড়ছেন নেমাত সাদাত, সাক্ষী কলকাতাও
‘বাচা খান বুঝেছিলেন, পাকিস্তানি সরকার তাঁর ছেলেমেয়েদের চাপে রাখবে। ফলে আফগানদের দুঃখদুর্দশা দাবি দাওয়া নিয়ে আর কেউ কথা বলার সাহস পাবে না। তাই বাচা খান বাংলাকে বেছে নেন। বাংলা বরাবরের প্রিয় জায়গা তাঁর। এখানকার মানুষ আফগানদের পাশে দাঁড়িয়েছে অতীতেও। ফলে লড়াইটা জারি থাকবে বাংলা থেকেই।’
আরও পড়ুন
অবশেষে পর্তুগালে ঠাঁই পেলেন আফগান মহিলা ফুটবলাররা
বছর পঞ্চাশের ইয়াসমিন, বিয়ে করেননি। নানাজি অর্থাৎ সীমান্ত গান্ধীর হাতেই প্রতিবাদের পাঠ পেয়েছেন তিনি। কলকাতার একটি উর্দু মিডিয়াম স্কুল, এবং রামমোহন কলেজের ডিগ্রি নিয়ে শিক্ষকতা করতে ঢুকেছিলেন ইস্কুলে। পরে সেই চাকরিও ছেড়ে আসেন, সংগঠনের মুখ চেয়ে।
আরও পড়ুন
মুণ্ডহীন ছাগল নিয়ে ‘পোলো’, আফগানিস্তানের জাতীয় খেলাতেও নৃশংসতার ছাপ
‘নানাজি সবসময় বলতেন, মেয়েরাই হাল ধরবে আন্দোলনের। তারাই এগিয়ে নিয়ে যাবে আজাদ পাশতুনিস্তানের বিরাসৎ।’
বর্তমানে আফগানিস্তান সম্পর্কে ইয়াসমিনকে প্রশ্ন করতে চেয়েও করতে চায় না মন। তাঁর মুখে নেমে আসে আষাঢ়ের কালো মেঘ। চোখে ঝিলিক মারে রাগের বিদ্যুৎ।
‘তালিবান জো কুছ ভি কর রহা হ্যায়, উও নানাজিকা আজাদ পাশতুনিস্তান ছোড়িয়ে, ইনসনিয়াত কি খিলাফ হ্যায়। জিসনে ভি উনকো জিৎ দিলায়া উনলোগো ভি গুনেগার হ্যায়।’
তাঁকে এখনো ফোন করে চলেছেন অসহায় কাবুলবাসীরা। ভারতে আশ্রয়ের আশায়। আর পার্ক সার্কাসের ছোট্ট ঘরে বসে আজাদ পাশতুনিস্তানের লড়াইয়ের আগুন আগলে রাখছেন বাচা খানের যোগ্য উত্তরসূরি।
Powered by Froala Editor