এক হাতে কাপড়ের ভারী ব্যাগ। অন্য হাতে হিসাবের খাতা। কড়া রোদের মধ্যেই গ্রামের মেঠো পথ ধরেই হেঁটে চলেছেন এক বয়স্ক ভদ্রমহিলা। বয়সের ছাপ পড়েছে শরীরে। তবু ক্লান্তি নেই এতটুকু। বরং, আনন্দের আভা ফুটে উঠেছে তাঁর সারা মুখে। রাধামণি কেপি (Radhamani KP)। বিগত ১১ বছর ধরেই এভাবেই বাড়ি বাড়ি বই পৌঁছে দিয়ে আসছেন কেরলের ওয়ানাড় জেলার মোথাক্কারা গ্রামের ৬৩ বছর বয়সী এই প্রবীণ লাইব্রেরিয়ান (Librarian)।
এই গ্রামেই জন্ম রাধামণির। তখন বড়োজোর তাঁর বয়স বছর পাঁচেক হবে। গ্রামে প্রথমবারের জন্য স্থাপিত হয়েছিল কোনো লাইব্রেরি। বইয়ের সংগ্রহ ছিল সামান্যই। তবে পড়ার নেশায় প্রায় রোজই সেখানে হাজির হতেন রাধামণি। কখনও কখনও একই বই বছরে দু-তিনবারও তিনি সংগ্রহ করতেন এই লাইব্রেরি থেকে।
ছ-দশক পর আজ সময় বদলেছে অনেকটাই। বেড়েছে মানুষের ব্যস্ততাও। পাশাপাশি সেইভাবে গ্রামের উন্নতি না হওয়ায়, গ্রামের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে এই লাইব্রেরিতে যাওয়াও বেশ দুরূহ হয়ে উঠেছে মানুষের কাছে। ফলে, ক্রমাগত পাঠকের সংখ্যা কমতে কমতে একপ্রকার বন্ধ হতে বসেছিল এই লাইব্রেরি। সেটা বছর দশেক আগের কথা। পরিস্থিতি দেখে নিজেই এগিয়ে আসেন রাধামণি। যদি পাঠকরা লাইব্রেরিতে এসে না পৌঁছাতে পারেন, তবে লাইব্রেরি কি পৌঁছে যেতে পারে না পাঠকদের কাছে?
এমন চিন্তাভাবনা থেকেই লাইব্রেরিয়ানের কাজ নেন রাধামণি। বিগত ১১ বছর ধরে সেই দায়িত্বই অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেছেন তিনি। লাইব্রেরি হারানো পাঠকদের বইমুখো করে তুলতে পায়ে হেঁটেই তিনি স্বয়ং বই নিয়ে হাজির হন তাঁদের বাড়িতে। সঙ্গে থাকে হিসেবের খাতা, লাইব্রেরিস স্ট্যাম্প। এক সপ্তাহ কোনো বই নিজের কাছে রাখার জন্য দিতে হয় মাত্র ৫ টাকা। আলাদা কোনো ‘ডেলিভারি চার্জ’ নেই তাঁর নিজের।
প্রতি মাসে অন্তত পক্ষে সাড়ে পাঁচশোরও বেশি পাঠকের কাছে এই পরিষেবা পৌঁছে দিচ্ছেন কেরলের বৃদ্ধা নাগরিক। তাঁর এই উদ্যোগে বেড়েছে লাইব্রেরির গ্রাহক সংখ্যাও। বইয়ের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা না থাকলে সত্যিই এভাবে উৎসর্গ করে দেওয়া যায় নিজেকে?
Powered by Froala Editor