সাক্ষরতার হার সর্বাধিক কেরালায়, দশম স্থানে বাংলা

একটি রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে কি শিক্ষাব্যবস্থার কোনো সরাসরি সম্পর্ক আছে? নাকি সামগ্রিক ঐতিহ্যের উপর নির্ভর করে শিক্ষার হার? নাকি প্রতিটি বিষয় আসলে পৃথক? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পেতে গেলে আমাদের চোখ রাখতে হবে পরিসংখ্যানের দিকে। আর সম্প্রতি ২০১৯ সালের শিক্ষা সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে ন্যাশানাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল অফিস (এনএসও)। আর এই পরিসংখ্যানে যথারীতি সবার উপরে আছে কেরালা। দ্বিতীয় স্থানে দিল্লি। কিন্তু সামগ্রিক পরিসংখ্যান আরও বেশ কিছু প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে আমাদের সামনে।

যে ২২টি রাজ্যের তথ্য নিয়ে পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে, তার মধ্যে সবার নিচে আছে অন্ধ্রপ্রদেশ। সেখানে সাক্ষরতার হার ৬৬.৪ শতাংশ। অন্যদিকে কেরালায় সংখ্যাটা ৯৬.২ এবং দিল্লিতে ৮৮.৭। আর সমস্ত রাজ্যের গড় সাক্ষরতা ৭৭.৭ শতাংশ। তবে পরিসংখ্যান বলছে, শুধুমাত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাক্ষরতার গ্রাফ চলেনি। বরং দেখা গিয়েছে হিমাচল প্রদেশ এবং আসামের মতো তথাকথিত অনুন্নত রাজ্যেও সাক্ষরতার হার ৮৬.৬ এবং ৮৫.৯ শতাংশ। অথচ মহারাষ্ট্র, গুজরাট বা পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যও অনেকটাই পিছিয়ে। পশ্চিমবঙ্গে সাক্ষরতার হার ৮০.৫ শতাংশ, যা অবস্থান করছে দশম স্থানে। তালিকার একেবারে শেষ ৫ রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশ, রাজস্থান, বিহার, তেলেঙ্গানা এবং উত্তরপ্রদেশ।

আবার সাক্ষরতার ক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্যের দিকটিও উঠে এসেছে এই পরিসংখ্যান থেকেই। উত্তরাখণ্ড বা হিমাচলপ্রদেশের মতো রাজ্যে সাক্ষরতার হার যথেষ্ট বেশি হলেও সেখানে লিঙ্গবৈষম্যও যথেষ্ট বেশি। এই দুই রাজ্যে সাক্ষর পুরুষ আর সাক্ষর নারীর ব্যবধান যথাক্রমে ১৩.৬ এবং ১২.৪ শতাংশ। অথচ পশ্চিমবঙ্গে সামগ্রিক সাক্ষরতার হার কম হলেও এখানে লিঙ্গবৈষম্য ৮.৭ শতাংশ। তবে এক্ষেত্রেও সবার থেকে এগিয়ে কেরালা। সেখানে লিঙ্গবৈষম্য মাত্র ২.২ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানেই পশ্চিমবঙ্গ।

অন্যদিকে শহরাঞ্চল এবং গ্রামাঞ্চলে সাক্ষরতার হারেও বেশ খানিকটা তফাৎ ফুটে উঠেছে পরিসংখ্যানে। সমস্ত রাজ্যেই গ্রামের থেকে শহরের সাক্ষরতা বেশি। তবে এক্ষেত্রেও কেরালার ক্ষেত্রে তফাৎটা অনেক কম। মাত্র ১.৯ শতাংশ। রাজস্থান এবং তেলেঙ্গানায় এই পার্থক্য সবচেয়ে বেশি। এই দুই রাজ্যে পার্থক্য যথাক্রমে ৩৮.৫ শতাংশ এবং ৩৮ শতাংশ। একমাত্র কেরালাতেই গ্রামীন সাক্ষরতার হার ৮০ শতাংশের বেশি। অন্যদিকে ১৩টি রাজ্যে সংখ্যাটা ৭০ শতাংশের কম।

আরও পড়ুন
পেরিয়ে গেল শিক্ষক দিবস, মহামারীর আবহে কতটা বদলাল শিক্ষার কাণ্ডারীদের পরিস্থিতি?

তবে সামগ্রিকভাবে একথা বলাই যায়, রাজ্যের সাক্ষরতা মূলত প্রশাসনিক সাফল্যের উপরেই নির্ভরশীল। এক্ষেত্রে কেরালা মডেল বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই গুরুত্বপূর্ণ সাফল্যের চিহ্ন রেখে চলেছে। অন্যদিকে আর্থিকভাবে উন্নত অনেক রাজ্যেও প্রশাসনিক ব্যর্থতার কারণে সাক্ষরতা কম। তবে সাক্ষরতার অভাব দক্ষ শ্রমিকের জোগানেও ঘাটতি সৃষ্টি করে। তাই শিক্ষাক্ষেত্রকে গুরুত্ব না দিলে যে সামগ্রিক উন্নতি সম্ভব নয় সেকথা বলাই বাহুল্য।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
দক্ষ শাসক হবেন সু-অভিনেতা, উপেক্ষা করতে হবে লোকনিন্দাও - মহাভারতের শিক্ষা এমনই

Latest News See More