এনসিইআরটি বই থেকে একের পর এক বাদ পড়ছে বিভিন্ন বিষয়। ইতিহাস বই থেকে গান্ধীহত্যা, মুঘল অধ্যায়, রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে আবুল কালাম আজাদ ও জম্মু-কাশ্মীরের সংযোজন বাদ পড়েছিল কিছুদিন আগেই। সম্প্রতি এনসিইআরটির সিলেবাস থেকে বাদ দেওয়া হয় জীববিজ্ঞানের অন্যতম স্তম্ভ ডারউইনের বিবর্তনবাদকে। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের পর এবার বড়ো পদক্ষেপ নিল কেরল। এনসিইআরটি (NCERT) থেকে ‘বাতিল’ হওয়া সিলেবাস পড়ানো হবে কেরলের ছাত্র-ছাত্রীদের, জানাল কেরালা স্টেট কাউন্সিল অফ এডুকেশন রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং।
কেরলের (Kerala) শিক্ষা পর্ষদের বয়ান অনুযায়ী, এনসিইআরটি পাঠক্রম থেকে বাদ যাওয়া অংশগুলি, বিশেষত ইতিহাস সম্পর্কিত বিষয়গুলি, যে-কোনো ভারতীয় শিক্ষার্থীর জন্য অবশ্যপাঠ্য। আর সেই কারণেই কেন্দ্রের সিলেবাস বদল হলেও, সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলি পড়ানো হবে কেরলের সমস্ত স্কুলে। এমনকি আগামীতে কেন্দ্রের ভরসায় না থেকে, পড়ুয়াদের জন্য পাঠ্যবই ছাপা শুরু করবে কেরল সরকারই। সংশ্লিষ্ট বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য বিশেষ কমিটিও গঠন করা হয়েছে বলেই জানাচ্ছে কেরল শিক্ষা পর্ষদ।
কেরল শিক্ষা পর্ষদ তথা ‘এসসিইআরটি’-র বিবৃতি ছাড়াও, সম্প্রতি কোচিতে আয়োজিত একটি জনসভায় স্বতন্ত্র পাঠ্যবই ছাপানোর কথা ঘোষণা করেন কেরলের শিক্ষামন্ত্রী শিবনকুট্টি ভি। অবশ্য এও জানান গোটা বিষয়টিই বর্তমানে রয়েছে আলোচনা ও পরিকল্পনার স্তরে। এখনও পর্যন্ত কেরল সরকারের শিলমোহর পড়েনি এই পরিকল্পনায়। তবে সাংবিধানিক অধিকার এবং ধর্ম-নিরপেক্ষতার কথা মাথায় রেখেই এই ব্যাপারে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে কেরল শিক্ষা পর্ষদ।
বিগত বেশ কিছুদিন ধরেই এনসিইআরটির সিলেবাস-বদল নিয়ে চর্চা চলছে গোটা দেশজুড়ে। অন্যথা হয়নি কেরলেও। পাঠ্যপুস্তক থেকে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও অধ্যায় বাদ দেওয়ার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন কেরলের বহু শিক্ষক। আবেদন করেছিলেন, পুরনো পাঠক্রম ফিরিয়ে আনার জন্য। তবে এ-বিষয় কোনোরকম প্রত্যুত্তর মেলেনি এনসিইআরটির থেকে। এমনকি সম্প্রতি এনসিইআরটি পাঠ্যবই থেকে বাদ যাওয়া ডারউইনের বিবর্তনবাদ, সংবিধান সভায় মৌলানা আবুল কালাম আজাদের গুরুত্ব ও কাশ্মীরের ভারত-ভুক্তি সম্পর্কিত বিষয়গুলির ব্যাপারে কোনো তথ্যও উল্লেখিত হয়নি এনসিইআরটির পাবলিক ডোমেইনে। অর্থাৎ, আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই বদলে দেওয়া হয়েছে বইয়ের বিষয়বস্তু। কেরলের শিক্ষামন্ত্রীর কথায়, নিজেদের ভাবধারা আগামী প্রজন্মের মধ্যে চাপিয়ে দিয়ে চাইছে কেন্দ্র সরকার। বিকৃত করছে পাঠক্রমকে। তাই বাধ্য হয়েই বিকল্পের অনুসন্ধানের পথে হাঁটতে হচ্ছে রাজ্যকে। কেরলের পর এই একই পথে হাঁটতে পারে ভারতের অন্যান্য রাজ্যও, সেই সম্ভাবনাও ক্রমশ বাড়ছে দিনে দিনে।
Powered by Froala Editor