ভারতের প্রথম ‘উভচর বাড়ি’, বন্যা মোকাবিলায় নজির কেরলের দুই তরুণের

সাম্প্রতিক সময়ে গোটা বিশ্বজুড়েই চর্চা চলছে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উঠে এসেছে নানান সমাধানসূত্র, জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধের নীল-নকশা। তবে এইসব সতর্কতা সঠিকভাবে গ্রহণ করলেও তৎক্ষণাৎ বদলাবে না পরিস্থিতি। বৈশ্বিক জলবায়ুর অবস্থা ফিরবে না আগের জায়গাতেও। ফলে, সাম্প্রতিক পরিবেশের সঙ্গেই মানিয়ে নিতে হবে সভ্যতাকে। এবার তেমনই এক সমাধানসূত্র খুঁজে দিলেন কেরলের দুই তরুণ প্রযুক্তিবিদ। 

উত্তর ভারতই হোক কি উত্তর-পূর্বের আসাম বা দক্ষিণের কেরল— প্রতিবছরই বন্যার প্রকোপ লক্ষ করা যাচ্ছে ভারতজুড়ে। চলতি বছরেও প্লাবনের জেরে আসামে প্রাণ হারিয়েছেন শতাধিক মানুষ। বাস্তুচ্যুত লক্ষাধিক। বৃষ্টিরেখার পরিবর্তনের কারণেই বার বার এধরনের বিপর্যয় ঘনিয়ে আসছে ভারতের বুকে। তবে বাঁধ নির্মাণেও ঠেকানো সম্ভব নয় এই পরিস্থিতি। বরং তাতে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভবনা প্রবল। তাই বন্যার সঙ্গে মানিয়ে নিতেই উভচর বাড়ি (Amphibian House) তৈরি করে ফেললেন কেরলের তিরুবন্তপুরমের প্রযুক্তিবিদ নানমা গিরিশ (Nanma Girish) এবং বেন জর্জ (Ben George)। 

হ্যাঁ, তাঁদের তৈরি এই বাড়ি অক্ষরিক অর্থেই উভচর। কারণ, সাধারণ বাড়ির মতো হলেও, বন্যার সময় ভেঙে পড়বে না এই বাড়ি। বরং প্লাবনের জলে ভেসে থাকবে তা। অনেকটা ভেনিসের ভাসমান বাড়ির মতোই। পরে বন্যার জল কমে এলে তা আবার মাটির ওপর ফিরে আসবে যথাস্থানে। 

নানমা এবং জর্জের এই প্রকল্প শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। প্রযুক্তিবিদ্যার স্নাতকোত্তর স্তরের প্রোজেক্ট হিসাবে এই অভিনব বাড়ি তৈরি করা শুরু করেছিলেন দুই প্রযুক্তিবিদ। তবে সেসময় সম্পূর্ণ সাফল্য মেলেনি তাঁদের। স্নাতকোত্তর পাশ করার পর, মোটা অঙ্কের চাকরি ছেড়ে জর্জ ও নানমা খুলে ফেলেন একটি স্বতন্ত্র নির্মাণ সংস্থা— ‘নেস্ট অ্যাবাইড’। অর্থ উপার্জনের জন্য সাধারণ বাড়ি ও অন্যান্য নির্মাণ প্রকল্পের কাজ করলেও, তাঁদের মূল লক্ষ্য ছিল উভচর বাড়ি সম্পর্কে গবেষণা চালিয়ে যাওয়া। 

আরও পড়ুন
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, টাইগ্রিসের গর্ভ থেকে উঠে এল প্রাচীন নগরী

২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে উভচর বাড়ির প্রথম সক্রিয় প্রোটোটাইপ তৈরি করেন জর্জ ও নানমা। কেরলের কোট্টায়াম জেলার কুরাভিলাংগদ অঞ্চলে স্থাপিতও হয় এই বাড়ি। কংক্রিটের তৈরি ফাঁপা প্ল্যাটফর্ম সংযুক্ত করা হয়েছে এই বাড়ির নিচে। প্রযুক্তিবিদ্যার ভাষায় যার নাম বুওয়েন্ট চেম্বার। বন্যার জলের উচ্চতা ৬ ফুট অতিক্রম করলেই এই প্ল্যাটফর্ম অনায়াসে ভাসিয়ে রাখতে পারবে দ্বিতল বাড়িকে। আশ্চর্যের বিষয়, সাধারণ বাড়ির তুলনায় এই বাড়ি তৈরির খরচও অনেকটাই কম। তরুণ প্রযুক্তিবিদদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মাত্র ১৫ লক্ষ টাকাতেই অনায়াসে তৈরি করা সম্ভব ৬০০ বর্গফুট ক্ষেত্রের দ্বিতল উভচর বাড়ি।

আরও পড়ুন
ভারতে প্রতিবছর ৭ লক্ষ মৃত্যুর নেপথ্যে জলবায়ু, জানাচ্ছে সমীক্ষা

‘অ্যাম্ফিনেস্ট’-খ্যাত এই বাড়ি ইতিমধ্যেই স্বীকৃতি পেয়েছে ইউনেস্কো এবং ডেলফট বিশ্ববিদ্যালয়ের। এমনকি ফোবর্সের প্রকাশিত এশিয়ার প্রথম ৩০টি উদ্ভাবনীর মধ্যেও জায়গা করে নিয়েছে ‘অ্যাম্ফিনেস্ট’। জলবায়ু পরিবর্তন আদৌ নিয়ন্ত্রণে আসবে যাবে কিনা, তা বলবে সময়। তবে আগামীদিনে বন্যার মোকাবিলায় কার্যকরী হয়ে উঠবে এই উভচর বাড়ি, তাতে সন্দেহ নেই কোনো…

আরও পড়ুন
জলবায়ু পরিবর্তনের জের, মুছে যাচ্ছে প্রাচীন গুহাচিত্র

Powered by Froala Editor

Latest News See More