পেশাগতভাবে সেলুলার বায়োলজিস্ট তিনি। জৈব অণু, প্রাণিকোশ এবং জিন টেকনোলজি নিয়েই তাঁর নিজস্ব জগৎ। কিন্তু শিকড়ের টান কি এড়ানো যায় সহজে? তাই বৈজ্ঞানিক জগৎ ছেড়ে বেড়িয়ে নিজের জন্মভূমির ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ করতেই অভিনব এক অভিযান চালালেন কেরলের বিজ্ঞানী। সাইকেলে চেপে পাড়ি দিলেন সহস্রাধিক কিলোমিটার পথ। সংগ্রহ করলেন কেরলের (Kerala) ঐতিহাসিক লাইটহাউসগুলির (Lighthouses) ছবি ও অন্যান্য তথ্য।
ডঃ আয়াপ্পান নায়ার (Ayappan Nair)। ক্যালটেক এবং নিউ জার্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করেছেন তিনি। জড়িত ছিলেন প্রথম সারির একাধিক গবেষণার সঙ্গেও। বছর চারেক আগে, ২০১৭ সালে দেশের টানে কেরলে ফিরে আসেন ডঃ নায়ার। নতুন উদ্যমে শুরু করেন গবেষণা। সেইসঙ্গে আরও একটি বিষয় নজর কাড়ে তাঁর। আর তা হল ভারতের কার্বন নির্গমনের অতিরিক্ত মাত্রা। জনগনকে সচেতন করতে সেইসময়ই ‘মাঠে’ নামেন তিনি। কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমাতে গাড়িতে যাতায়াত বন্ধ করে শুরু করেন সাইক্লিং।
বছর খানেক আগে, তাঁরই এক স্থানীয় বন্ধু কথায় কথায় তাঁকে জানান কেরলের সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে লুকিয়ে রয়েছে অজস্র প্রাচীন বাতিঘর। যাদের মধ্যে কোনো কোনো বাতিঘরের বয়স প্রায় হাজার বছর। এই তথ্যই যেন অভিযানে বেরিয়ে পড়ার বাড়তি উদ্যম জোগায় ডঃ নায়ারকে। কোনো সঙ্গীর অপেক্ষা না করে, লকডাউনের সময়ে একাই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি। অতিক্রম করেন প্রায় ১১০০ কিলোমিটার পথ। সব মিলিয়ে কেরলের উপকূলবর্তী ২০টি বাতিঘরের ছবি এবং তথ্য সংগ্রহ করেন তিনি। প্রাচীন যুগ থেকেই ভারতের সঙ্গে চিন, মায়ানমার, কম্বোডিয়া, আরব ও মিশরের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল ভারতের। স্থলপথের পাশাপাশি সমুদ্রের মাধ্যমেও চলত বাণিজ্য। সেইসময়েই তৈরি হয়েছিল এই বাতিঘরগুলি। এমনটাই জানাচ্ছেন খ্যাতনামা জীববিজ্ঞানী।
তবে তথ্যগত ভ্রান্তি থেকে যাওয়ায় তাঁর গন্তব্যের তালিকা থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিল কেরলের আরও একটি ঐতিহ্যবাহী বাতিঘর— টাঙ্গেসেরি লাইটহাউস। তুলনামূলকভাবে তার বয়স অনেকটাই কম। তৈরি হয়েছিল ১৯০২ সালে। আর সেই কারণেই হয়তো তার সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে জানতে পারেননি ডঃ নায়ার। সম্প্রতি, কেরলের অফিসার ইন চার্জ অফ লাইট হাউসেসের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে তা জানতে পারেন ডঃ নায়ার। এই নতুন লাইট হাউসের অনুসন্ধানে আজ আবার পথে নামছেন তিনি। সঙ্গী সেই দু’চাকার বাইসাইকেল। নিজের শিকড়ের খোঁজে ডঃ নায়ারের এই উদ্যোগকে অনবদ্য বললেও কম বলা হয় হয়তো…
আরও পড়ুন
আমাজনের গাছের শরীরে বিষাক্ত পারদ, শঙ্কিত বিজ্ঞানীরা
Powered by Froala Editor