একবিংশ শতকের এই আধুনিক দুনিয়ায় দাঁড়িয়েও বেশ কিছু এমন ঘটনার খবর আসে, যা আমাদের আধুনিকতাকেই প্রশ্ন তোলে। বিয়ে আমাদের সমাজের, সংস্কৃতির একটি রেওয়াজ। দুটো মানুষের জীবন একে অপরের সঙ্গে জুড়ে দেয় যে অনুষ্ঠান, তাকে অস্বীকার করার তো উপায় নেই! কিন্তু সেটাই যদি ভিনজাত বা ভিনধর্মে হয়? ভারতে আজও এমন ঘটনায় কী হয়, সবাই কমবেশি জানি। সেটা যাতে না হয়, তার জন্য নয়া উদ্যোগ নিল কেরালা সরকার।
আরও পড়ুন
ক্রমশ কমছে কন্যাসন্তান জন্মের হার
দুটো মানুষ পরস্পরকে ভালোবাসে। চার হাত এক করতে চায়। কিন্তু তাদের তথাকথিত ‘জাত’, ‘ধর্ম’ আলাদা। ফলস্বরূপ, পরিবারের চাপ, সমস্যার শুরু। সেসব দম্পতিদের বাঁচাতেই নতুন পদক্ষেপ নিল কেরালা প্রশাসন। সেখানে সরকারের তরফ থেকেই ‘সেফ হোম’ তৈরি করে দেওয়া হবে। যেখানে ওই মানুষগুলোকে ঠিকঠাক পাহারা দিয়ে রাখা হবে। কেউ যাতে কোনো ক্ষতি করতে না পারে, সেটাই নিশ্চিত করবে প্রশাসন। ইতিমধ্যেই এই সেফ হোম তৈরির প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন কেরালার সোশ্যাল জাস্টিসের মন্ত্রী কে কে শৈলজা। আপাতত বিয়ের পর এক বছরের জন্য এই বন্দোবস্ত করা হবে। এছাড়াও, স্বনির্ভরতার জন্য সরকারের তরফ থেকে দম্পতিকে ৩০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। যদি দুজনের একজন দলিত হন, তবে তাঁদের ৭৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু কিছুতেই যাতে তাঁদের জীবন আক্রান্ত না হয়, সেটার সম্পূর্ণ ব্যবস্থা করা হবে।
আরও পড়ুন
প্রতি আট মিনিটে নিখোঁজ একজন শিশু, কেন্দ্রীয় রিপোর্টে শঙ্কায় ভারত
আজকের এই ডিজিটাল, আধুনিক সময় এসেও ভিনজাতে বিয়ে করার জন্য মেরে ফেলার ঘটনা শুধু নৃশংস নয়, বর্বরও। যদি ছেলেমেয়েদের সেরকম ‘মতি’ হয়, তাহলে বোঝানো হয় প্রথমে। তাও যদি ওরা ‘কথা’ না শোনে, পরিবারের ‘সম্মানের’ কথা না ভাবে, তাহলে যে কী কী করা হয়, তার নিদর্শন আমরা সকলেই শুনেছি। কেউ কেউ হয়ত বাস্তব জীবনে সাক্ষীও থেকেছেন। শুধু সিনেমার পর্দা বা প্রাচীন ভারত নয়, আজও ভয়ংকরভাবে সত্য এই সব নৃশংসতা। কেরালা সরকারের এই সিদ্ধান্ত অবশ্যই স্বাগত।
আরও পড়ুন
গত ১৬ বছরে খুন হয়েছেন ১৭৩৮ জন পরিবেশকর্মী
সেই সঙ্গে উঠে আসছে দুটি প্রশ্নও। এক, এই ঘটনা সারা ভারতে ছড়িয়ে আছে। কেরালা ছাড়িয়ে সব জায়গায় কবে এমন উদ্যোগ শুরু করা হবে। আর দুই, সরকার তাঁর নাগরিকদের সুরক্ষার কথা ভেবেছেন এখানে। সেখানে আগে জাত, ধর্ম, লিঙ্গ কিচ্ছু আসেনি। কিন্তু এমন পরিস্থিতির সামনে আসতে হবে কেন? আমরা কি নিজেরা সমাজে এমন বর্বরতা বন্ধ করতে পারি না? বেজাত, বিধর্মী এই তকমাগুলো থেকে বেরিয়ে একটু মানুষ হিসেবে সবাইকে দেখতে শুরু করি না আমরা! প্রশ্ন অনেক, উপায় অনেক; কিন্তু পরিস্থিতি যে এখনও ভয়ানক, সেটাই উস্কে দিল কেরালা সরকারের এই সিদ্ধান্ত।