১৮৭২ সাল, অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় দেড় শতাব্দী আগের কথা। কেরালার তালসাড়ি গ্রামে বসে একটি মালায়ালম অভিধান লিখেছিলেন হারম্যান গুনডার্ট। আজও সেই অভিধান যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য বলে মনে করা হয়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও আধুনিক এবং নিখুঁত অভিধানের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। আর এবার সেই তালসাড়িতে বসেই আরও একটি অভিধান লেখার কাজ শেষ করলেন ৮৩ বছরে নাত্ত্যেলা শ্রীধরন। তবে এই অভিধান শুধু মালায়ালম ভাষার নয়। তার সঙ্গে আছে তামিল, তেলেগু এবং কন্নড় ভাষার যাবতীয় শব্দ। দাক্ষিণাত্যের চারটি ভাষাকে নিয়ে মোট ১২.৫ লক্ষ শব্দের এক বিরাট অভিধান প্রকাশ করলেন শ্রীধরন।
ভাবতে অবাক লাগে, দীর্ঘ অধ্যাবসায় নিয়ে এই বিরাট কাজটি যিনি করেছেন, তাঁর সেভাবে কোনো প্রথাগত শিক্ষা নেই। চতুর্থ শ্রেণির পর স্কুল ছেড়েছিলেন শ্রীধরন। পরিবারের আর্থিক সমস্যা মেটাতে কাজ নিয়েছিলেন একটি বিড়ি কারখানায়। কিন্তু মন থেকে পড়াশোনার প্রতি ভালোবাসা মুছে যায়নি। পরে মুক্ত বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষা দিয়েছিলেন। সেই যোগ্যতার ভিত্তিতে একটি সরকারি চাকরিও পেয়েছিলেন। প্রথাগত পড়াশোনা হয়ে ওঠেনি ঠিকই, কিন্তু যখন হাতের কাছে যা পেয়েছেন তাই পড়েছেন। আর নানা ধরণের মানুষের সঙ্গে মিশে শুনেছেন তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা। জীবন থেকেই পেয়েছেন সমস্ত শিক্ষা।
নানা ভাষাভাষীর মানুষের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই একদিন তিনি আবিষ্কার করলেন, দক্ষিণের প্রতিটি ভাষার শব্দভাণ্ডার প্রায় একইরকম। অর্থাৎ একটি ভাষার সঠিক প্রতিশব্দ পাওয়া যায় অন্য একটি ভাষাতেও। আর তখনই শুরু করে দিলেন এমন একটি অভিধান লেখার কাজ। ১৯৯২ সাল থেকে কাজ শুরু করলেও ১৯৯৪ সালে চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পরেই পুরোদমে সময় দিতে পেরেছেন। এর মধ্যে মাঝেমধ্যেই সমস্যায় পরেছেন। হয়তো কোনো একটি শব্দের একটি নির্দিষ্ট ভাষার প্রতিশব্দ খুঁজে পাচ্ছেন না। সঙ্গে সঙ্গে ছুটেছেন সেই ভাষাভাষীর মানুষের কাছে। অবশেষে কাজ শেষ করলেন শ্রীধরন। তাঁর কাজে তিনি নিজেও যেমন খুশি, তেমনই অবাক সকলে।
Powered by Froala Editor