প্রকৃতি শুধুই মানুষের প্রয়োজন মেটানোর উৎস নয়। এই প্রকৃতিতে প্রতিটি প্রাণের সমান গুরুত্ব রয়েছে। সেই কথায় নতুন করে মনে করিয়ে দিতে চাইছেন কেরালার (Kerala) গোপালকৃষ্ণন কেআর (Gopalkrishnan KR)। ৬৭ বছরের গোপালকৃষ্ণন বিগত ৭ বছর ধরে তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন আস্ত একটি অরণ্য (Forest)। সাজানো বাগান নয়। ১ একর জমির উপর প্রকৃতির নিজের খেয়ালে তৈরি অরণ্য। যেখানে একসময় ছিল রাবার চাষের কৃত্রিম বাগান, এখন সেখানে অসংখ্য গাছের মধ্যে খেলা করে নানা প্রজাতির পশু-পাখি।
পেশায় ব্যাঙ্কের কর্মচারী ছিলেন গোপালকৃষ্ণন। ৬০ বছর বয়সে কাজ থেকে অবসর নিয়ে নিজের ভালোবাসার কাছে ফিরে এসেছেন তিনি। অবসর নেওয়ার সময় সমস্ত সঞ্চয় হিসাব করে ১৫ লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন তিনি। সেই টাকা দিয়েই ত্রিশূর শহরের উপকণ্ঠে ১ একর জমি কিনে নিয়েছিলেন। জমিটা পছন্দ হওয়ার পিছনে একটাই কারণ ছিল। পাশের বনভূমি থেকে তার দূরত্ব খুব বেশি নয়। আর তাই পশু-পাখি নিজের ইচ্ছে মতো সেখানে চলে আসতে পারবে সহজেই।
সামাজিক বনসৃজনের চেয়ে একটু অন্য পথে হাঁটতে চেয়েছিলেন গোপালকৃষ্ণন। তাই প্রথমেই জমি থেকে রাবার গাছগুলি উপরে ফেলেছিলেন। কারণ এই ধরনের বিদেশি গাছ স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি করে। তবে রাবার গাছ ছাড়া অন্য যে সমস্ত গাছ ছিল, তাদের অক্ষত অবস্থায় রেখে দিয়েছিলেন। তারপর নানা প্রজাতির ফলের গাছ, ঔষধি গাছ এনে পুঁতেছেন সেই জমিতে। এর মধ্যে আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, ন্যাসপাতির মতো নানা প্রজাতির গাছই রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০০ পৃথক প্রজাতির গাছের মধ্যে ২০০টি ফলের গাছের প্রজাতি রয়েছে এই অরণ্যে।
গাছ রোপণ করতে আরও প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে যায় গোপালকৃষ্ণনের। তবে এর পরের কাজটাই ছিল সবচেয়ে কঠিন। গাছেদের তাদের নিজের মতো করে বেড়ে উঠতে দেওয়া। তাঁর নিজের বাড়ি থেকে এই অরণ্যের দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। অথচ সবসময় নজর রাখতে হয়েছে, অবাঞ্ছিত কেউ এসে যেন গাছেদের ক্ষতি না করে। আবার অরণ্যের চারদিকে বেড়া দেওয়াও যায়নি। কারণ তাহলে পশু-পাখির রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে। তবে ৭ বছরের নিরন্তর চেষ্টায় অবশেষে সফল হয়েছেন তিনি। গোপালকৃষ্ণন এই অরণ্যের নাম রেখেছেন ‘প্রাণ’। গাছপালা এবং পশু-পাখিদের নিয়ে সত্যিই এক নতুন প্রাণের জোয়ার তুলেছেন তিনি।
আরও পড়ুন
সিঙ্গাপুরে তিন দশকের অরণ্যবাস বৃদ্ধের
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
রেললাইন সম্প্রসারণে ১২.৭ হেক্টর ম্যানগ্রোভ অরণ্য ধ্বংসের সিদ্ধান্ত মুম্বাইয়ে