৪৩টি দেশে পত্রমিতালি, হারানো অভ্যাস ফেরাচ্ছেন কেরালার তরুণী

ঘরভর্তি নানা উপহার। টেবিলের উপর চকোলেটের বাক্স বা বইয়ের ভাঁজে কোনো বিদেশি গাছের পাতা অথবা অজানা কোনো পাখির পালক। তবে এটকুই সব নয়। বাক্সভর্তি রয়েছে অজস্র চিঠি। এগুলোই রেজবিন আব্বার প্রকৃত পাওনা। কেরালার মালাপ্পুরম জেলার ১৮ বছরের তরুণী রেজবিন। কোনোদিন নিজের গ্রামের বাইরেও পা রাখেননি তিনি। অথচ পৃথিবীর ৪৩টি দেশে ছড়িয়ে রয়েছে তাঁর বন্ধুরা। তাঁরাই চিঠি লিখেছেন, সঙ্গে পাঠিয়েছেন নানা উপহার। ভাবছেন চিঠি লেখা তো পুরনোদিনের রীতি? তবে এই অভ্যেসই বদলে দিয়েছে রেজবিনের জীবন।

আজ থেকে ঠিক ১০ বছর আগে বিবাহবিচ্ছেদ হয় রেজবিনের বাবা-মায়ের। রেজবিন ও তাঁর ছোটো ভাই থেকে যান মায়ের কাছেই। কিন্তু সেই সময় থেকেই নানারকম বিদ্রূপের মুখে পড়তে হয় রেজবিনকে। একবার জানতে পারেন, তাঁর খুব কাছের এক বন্ধু রেজবিনকে অনাথ বলে উল্লেখ করেছেন। অনেক বন্ধুকে তাদের বাবা-মা রেজবিনের সঙ্গে খেলতে বারণ করে দিয়েছেন। এই সময় রীতিমতো অবসাদের মধ্যে চলে গিয়েছিলেন রেজবিন। ঘর থেকে বেরনোই কার্যত বন্ধ করে দিয়েছিলেন। স্কুলে গেলেও বন্ধুদের বিদ্রুপ সহ্য করতে হত। আড়ালে তাঁকে নিয়ে আলোচনা চলত সবসময়ই। কখনও কখনও তাঁর সামনেও কুরুচিকর মন্তব্য করতেন অনেকে।


ঠিক এই সময়েই ঘটে গেল ঘটনার মতো একটি ঘটনা। চেনাজানা সমাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমেই সময় কাটাতেন রেজবিন। সেখানে দেশবিদেশের নানা বন্ধু জুটিয়ে ফেলেছিলেন। একদিন সেখানেই রেজবিনের হাতের কাজ দেখে প্রশংসা করেন মেক্সিকোর এক যুবতী। তারপর কথাবার্তাও এগোয়। হঠাৎই রেজবিনের ঠিকানা চেয়ে বসেন সেই যুবতী। কোনোকিছু না ভেবেই ঠিকানা দিয়ে দিয়েছিলেন রেজবিন। আর সপ্তাহখানেকের মধ্যেই তাঁর হাতে এসে পড়ে সুন্দর হস্তাক্ষরে লেখা একটি চিঠি। সেটা ২০১৮ সাল। সেই থেকেই চিঠি লেখার এবং চিঠি পাওয়ার নেশা ধরে যায় রেজবিনের। তাঁর এই নেশার সঙ্গে সঙ্গত দিতে থাকেন সামাজিক মাধ্যমের বেশ কয়েকজন বন্ধু।

আরও পড়ুন
ক্যাম্প-পালানো দুই ইহুদি তরুণীকে বাঁচিয়েছিলেন প্রপিতামহ, জানাল পুরনো চিঠি

বিভিন্ন দেশের নিজস্ব সংস্কৃতি থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত জীবন, চিঠিতে উঠে আসে নানা দিক। রেজবিনের এই ‘পেন ফ্রেন্ড’-রা ক্রমশ ভুলিয়ে দিয়েছেন, একসময় তাঁর বাবা-মার বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে কতটা অপমান সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে। অবশ্য এই চিঠি লেখার অভ্যাস নিয়েও কম কথা শুনতে হয় না তাঁকে। এভাবে অপরিচিত মানুষদের বাড়ির ঠিকানা জানানোয় আপত্তি জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা। কেউ কেউ আবার বলেছেন, এই বয়সের একজন মেয়ে এমন কাণ্ড করলে তাঁর বিবাহও হবে না। অবশ্য এইসব কোনো কথাকেই পাত্তা দিতে রাজি নন রেজবিন। এর মধ্যেই যে প্রাণের তৃপ্তি খুঁজে পান তিনি।

আরও পড়ুন
গালিবের চিঠি অনুবাদ করে সাহিত্য আকাদেমি-জয়ী পুষ্পিত মুখোপাধ্যায়

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
সমুদ্রতলে পোস্ট অফিস, ডুবসাঁতার দিয়ে পৌঁছতে হয় চিঠি!