বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে ক্রমশ গলে যাচ্ছে মেরু অঞ্চলের বরফ। সমুদ্রের জলস্তর বাড়ছে। আর এর সঙ্গে নিয়ম করে ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ তো রয়েছেই। এই সমস্ত সমস্যা থেকে উপকূল অঞ্চলকে রক্ষা করতে পারে একমাত্র ম্যানগ্রোভ অরণ্য। কিন্তু সেই অরণ্যও ক্রমশ হারিয়ে যেতে বসেছে। ক্ষয়িষ্ণু বনভূমিকে বাঁচিয়ে রাখার কথা আর কতজনই বা চিন্তা করেন? তবে কেরালার মৎস্যজীবী মুরুকেসন টিপি চিন্তা করেছেন। বিগত কয়েক দশক ধরে অন্তত ৪০ হাজার ম্যানগ্রোভ গাছ রোপণ করেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, নিয়মিত তাদের পরিচর্যার দায়িত্বও নিয়েছেন। আর মুরুকেসনের এই কাজের স্বীকৃতি হিসাবেই এবার তিনি পিভি থাম্পি মেমোরিয়াল এনডাওমেন্ট পুরস্কার পেতে চলেছেন। পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়ে বিশেষ অবদানের জন্য প্রতি বছর দেওয়া হয় এই পুরস্কার। ২৪ তম বছরে সেই পুরস্কার পাচ্ছেন মুরুকেসন টিপি।
পেশায় মৎস্যজীবী মুরুকেসন। অথচ সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া হয় না বহুদিন। পরিবেশ সুরক্ষার কাজেই কাটিয়ে দেন সারাদিন। শুরুটা হয়েছিল মাছ শিকার করে ফেরার পথে কিছু ম্যানগ্রোভ গাছ লাগানোর মধ্য দিয়ে। কিন্তু সেখানেই থেমে থাকেনি বিষয়টা। ক্রমশ চেল্লানাম, বল্লারপদম, চেরাই সহ অন্তত ৭টি পঞ্চায়েত অঞ্চলে গাছ লাগিয়েছেন তিনি। আর সেই সংখ্যাটা ৪০ হাজারের কম নয়। গাছ লাগানোর পাশাপাশি স্থানীয় মানুষদের মধ্যে ম্যানগ্রোভ অরণ্যের প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে সচেতনও করেন তিনি। উপকূলের ভূমিক্ষয় রোধে তো ম্যানগ্রোভ গাছেদের ভূমিকা রয়েছেই। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপও আটকে দিতে পারে অরণ্য। এমনকি এই অরণ্য হারিয়ে গেলে মাছ থেকে শুরু করে পাখি, সবারই অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। গ্রামের সাধারণ মানুষদের এই বিষয়ে সচেতন করাই সবচেয়ে বড়ো কাজ বলে মনে করেন মুরুকেসন।
তবে শুধু ম্যানগ্রোভ অরণ্য সৃজনই নয়, ২০১৮ সাল থেকে তিনি সমুদ্রের ধারে ঝাউগাছ লাগানোর কাজও শুরু করেছেন। উপকূলের সৌন্দর্য বাড়াতে এখন কিছু ঝাউয়ের বাগান দেখা যায় ঠিকই। তবে আগের মতো ঘন ঝাউবন আর দেখাই যায় না। অথচ উপকূলের ভূমিক্ষয় রোধে ঝাউ গাছের ভূমিকাও নেহাৎ কম নয়। এসবের পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে কাছিম সংরক্ষণের কাজও করে চলেছেন মুরুকেসন। গতবছর তাঁর হাতে প্রাণ পেয়েছে ৮০টি অলিভ রিডলে কাছিমের শাবক। তাঁর এই নিরলস পরিশ্রম পরিবেশকে পুরোপুরি বাঁচাতে না পারলেও অনেকটাই স্বস্তি দিচ্ছে, সে-কথা বলাই বাহুল্য। সাংবাদিক পিভি থাম্পি স্মৃতি পুরস্কার সেই কাজকেই আরও কিছুটা উৎসাহিত করবে।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
ম্যানগ্রোভ ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় সেরা বাঙালি আলোকচিত্রী