ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই ছোট্ট ডিঙা নিয়ে পজয়াংগাড়ি নদীতে বেরিয়ে পড়েন কান্দাল রাজন। কেরালার কন্নুর জেলার মৎস্যজীবী রাজন। পেশার টানেই রোজ নদীতে পাড়ি জমান তিনি। তবে সারাদিন তাঁর চোখ থাকে উপকূলের দিকে। কোথাও অস্থানে কোনো ম্যানগ্রোভ গাছ জন্মেছে কিনা, বা ম্যানগ্রোভ গাছের জন্য নিরাপদ কোনো জায়গা আছে কিনা – তাই খুঁজতে থাকেন সবসময়। মালাবার উপকূল থেকে হারিয়ে যেতে বসা ম্যানগ্রোভ অরণ্যকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। নিজের বাড়িতে ম্যানগ্রোভ গাছেদের একটি নার্সারিও গড়ে তুলেছেন তিনি।
৩ দশক আগেও কেরালার প্রায় ৭০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছিল ম্যানগ্রোভ অরণ্য। সেই পরিমাণটা এখন কমতে কমতে ২১ বর্গকিলোমিটারে এসে দাঁড়িয়েছে। একদিকে ধান চাষের জমির জন্য কেটে ফেলা হচ্ছে ম্যানগ্রোভ অরণ্য। অন্যদিকে সরকারি উদ্যোগেই চলছে চিংড়ি এবং কাঁকড়া চাষ। তাতেও প্রতিদিন জঙ্গলের আয়তন কমে আসছে। বনবিভাগের কর্তারাও তাই নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। আগে তাও অর্ধেকের বেশি অরণ্য ছিল সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন। কিন্তু এখন সবটাই প্রায় চলে গিয়েছে ব্যক্তিগত মালিকানার আওতায়। ফলে বনবিভাগের পক্ষেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন হয়ে উঠছে।
তবে এইসব জটিলতার মধ্যেও হাল ছাড়তে রাজি নন রাজন। ছোটোবেলায় বাবার সঙ্গে সমুদ্রে যেতেন যখন, তখন থেকেই ম্যানগ্রোভের পরিচর্যা শুরু করেছিলেন তিনি। এখন তাঁর বয়স ৫৮ বছর। এতদিনের এই অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্যই এলাকায় তিনি কান্দাল রাজন নামে পরিচিত হয়ে উঠেছেন। মালায়ালি ভাষায় কান্দাল মানে ম্যানগ্রোভ। প্রথমে নিছক শখেই গাছ লাগাতেন। সময় যত এগিয়েছে, সেটাই লড়াই হয়ে উঠেছে তাঁর কাছে। এমনকি তাঁর চোখের সামনেই তাঁর নিজের হাতে লাগানো গাছ কেটে ফেলতেও দেখেছেন বহুবার। প্রথম প্রথম নীরবেই সব মেনে নিতেন রাজন। তবে এখন তিনি গাছ কাটতে দেখলে প্রতিবাদ করেন। প্রয়োজনে বনবিভাগেও খবর দেন।
গাছ লাগানোর পাশাপাশি বাড়িতে প্রায় ৫ হাজার গাছের একটি নার্সারিও তৈরি করেছেন তিনি। আশেপাশের এলাকা থেকে, এমনকি দূর-দূরান্ত থেকেও অনেকে সেই গাছ সংগ্রহ করে নিয়ে যান। তবে গাছেদের এলাকাই যে ক্রমশ কমে আসছে। রাজন তাই প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। যেখানে ম্যানগ্রোভ অরণ্য গড়ে তোলা সম্ভব। ম্যানগ্রোভ না থাকলে যে মাছেদের প্রজনন হবে না। আর ঘূর্ণিঝড় থেকে শুরু করে উপকূলের ভূমিক্ষয় রোধ করাও অসম্ভব হয়ে পড়বে।
Powered by Froala Editor