রোবটিক্সের মাধ্যমে পুতুল নাচ, ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে বাঁচাতে উদ্যোগ ইঞ্জিনিয়ারের

পুতুলনাচের কথা সকলেই কম-বেশি জানি আমরা। নব্বইয়ের দশকেও বাংলার বিভিন্ন গ্রামে বা মফস্বলের মেলায় বসত পুতুল নাচের আসর। আজ সেই চল উঠে গেছে সম্পূর্ণভাবে। দক্ষিণ ভারতের কেরলেও প্রচলিত আছে এই একই ধরনের শিল্প। তবে শুধু পুতুলনাচ (Puppetry) বললে খানিকটা ভুল হবে তাকে। কারণ, তার সঙ্গে মিশে রয়েছে ছায়াশিল্পও। ‘থোলপাভাকুথু’ (Tholpvakoothu)। স্থানীয় ভাষায় এই শিল্পের নাম এমনই। 

বাংলার পুতুলনাচের মতোই কেরলে এখন বিপন্নপ্রায় থোলপাভাকুথু। প্রায় ৭০০ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পের প্রতি ক্রমশ আগ্রহ হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এবার প্রযুক্তির (Robotics) দৌলতেই নতুন করে প্রাণ সঞ্চার হচ্ছে এই শিল্পে। নেপথ্যে কেরলের পালাক্কড় জেলার প্রযুক্তিবিদ সজীশ পুলাভার। 

কেরলের এই বিলুপ্তপ্রায় শিল্পের চর্চা হয় কেবলমাত্র মন্দিরে। চামড়া দিয়ে বানানো হয় দেব-দেবীদের পুতুল। তারপর রাতের অন্ধকারে মোমের আলো সামনে রেখে পুতুলনাচের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয় রামায়ণ কিংবা মহাভারতের গল্প। তবে দর্শকরা এই সবটাই দেখেন চাদরের পর্দায়। ছায়ার আকারে। ৮-১০ জন শিল্পীর দল টানা ২১ দিন ধরে প্রদর্শন করেন প্রায় ২১০ ঘণ্টার এই ‘শো’। তবে ক্রমশ মানুষের ব্যস্ততা কমায়, কমেছে এই শিল্পের জনপ্রিয়তা। 

মূলত, পুলাভার সম্প্রদায়ের মানুষেরাই জড়িত ছিলেন এই শিল্পের সঙ্গে। সজীশের পরিবারেরও ১৩ প্রজন্মের কাছে উপার্জনের রাস্তা ছিল এই শিল্পটিই। তবে ক্রমশ উপার্জন কমায় ধীরে ধীরে অন্য কাজের পথ বেছে নিয়েছেন অধিকাংশ শিল্পীই। সজীশ নিজেও বেছে নিয়েছিলেন আধুনিকতর জীবন। ঐতিহ্য ছেড়ে নাম লিখিয়েছিলেন বড়ো মাল্টিন্যাশনাল রোবটিক্স কোম্পানিতে। তবে গোটা ছবিটাই বদলে যায় লকডাউনে। নতুন উদ্যমে ‘থোলপাভাকুথু’-কে সজীব করে তোলার উদ্যোগ নেন সজীশ। প্রযুক্তির মাধ্যমে। উদ্দেশ্য শুধু তীর্যযাত্রীদের কাছে নয়, বরং এই শিল্পকে সাধারণের কাছে উপস্থাপন করা।

আরও পড়ুন
কলমকারি শিল্পকে বাঁচাতে স্কুল পড়ুয়াদের উদ্যোগ

তবে এই ভাবনার জন্ম হয়েছিল ২০১৫ সালেই। তখন কলেজের ছাত্র সজীশ। পরিকল্পনা থাকলেও অর্থের অভাবে এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি সেসময়। লকডাউনে অবসর সময়ে ঘরে বসেই স্বয়ংক্রিয় পুতুলনাচের গোটা পরিকাঠামো তৈরি করে ফেলেন সজীশ। চামড়ার পুতুলের মধ্যেই প্রতিস্থাপন করেন রোবটিক্সের যন্ত্রাংশ। তারপর প্রোগ্রামিং-এর মাধ্যমে চালিত করেন সেই পুতুলকে। 

আরও পড়ুন
জেলখানাকে শিল্পক্ষেত্রের রূপ দিতে এগিয়ে এলেন ব্যাংকসি

মহামারীর পরিস্থিতি খানিক স্বাভাবিক হওয়ার পর, এই প্রকল্পকে সাধারণ মানুষের সামনে উপস্থাপন করা শুরু হয়। পালাক্কড় জেলার মণি আইয়ার হেরিটেজ মিউজিয়ামে প্রদর্শিত হচ্ছে এই রোবটচালিত পুতুল নাচ। তাছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন জেলাতেও পৃথকভাবে তিনি আয়োজিত করছেন এই শিল্পের প্রদর্শনী। তাতে ক্রমশ জনপ্রিয়তার পথে ফিরছে এই প্রাচীন শিল্প।

আরও পড়ুন
শিল্পী হরেন দাসের আঁকা ছবির প্রদর্শনী দক্ষিণ কলকাতায়

তবে যন্ত্র মানবশিল্পীর বিকল্প হতে পারেন না বলেই বিশ্বাস তাঁর। পাশাপাশি এখনও এই শিল্পে জড়িত থাকা মানুষদের জীবিকাতেও টান পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে যন্ত্রের প্রচলনে। সেই কারণে মন্দিরে প্রদর্শনীর সুযোগ পেলেও তা ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। শুধুমাত্র শিল্পটিকে পুনরুজ্জীবিত করে তুলতেই তাঁর এই উদ্যোগ। আর তা যে ক্রমশ সাফল্যের দিকে এগিয়ে চলেছে, সন্দেহ নেই কোনো…

Powered by Froala Editor

Latest News See More