পুজো মানেই পুজোর চাঁদা।
১৭৬০ সালেই বারোজন ইয়ারবন্ধু মিলে বারোয়ারি পুজো শুরু করেন। আর বারোয়ারি পুজো মানেই চাঁদা আদায়। এ নিয়ে হুতোম লিখেছেন এই চাঁদা আদায়কারীরা নাকি দ্বিতীয় অষ্টমের পেয়াদা ছিলেন। অষ্টমের পেয়াদা মানে অষ্টম আইনে ইংরেজ সরকার যে খাজনা নিত, তা আদায়ের পেয়াদা। এমনই নিষ্ঠুর ছিলেন তাঁরা।
সমাচার দর্পণে ১৮৪০ নাগাদ প্রায়ই খবর বার হত, বেহালা অঞ্চলে নাকি বারোয়ারি পাণ্ডাদের চাঁদার জুলুমে পথ চলা দায়। তাদের পাণ্ডা স্বয়ং সাবর্ণ চৌধুরীর বাড়ির ছেলেরা, ‘মান্য সাবর্ণ মহাশয়দিগ দের যুবা সন্তানেরা বারোয়ারী পূজার নিমিত্ত অনেক লোকের উপর অত্যাচার করিতে ছিলেন... স্ত্রী লোকের ডুলি পালকি দৃষ্টি মাত্রই বারোয়ারীর দল একত্র হইয়া তৎক্ষণাৎ আটক করিতেন এবং তাহাদিগের ইচ্ছামত প্রণামী না পাইলে কদাপি ছাড়িয়া দিতেন না।’ শেষে চব্বিশ পরগনার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পেটন নারী বেশ ধরে এদের পাকড়াও করেন ও জেলে পোরেন।
তবে সব জায়গায় যে জোরাজুরি চলত, তা নয়। একবার এক কৃপণ চাঁদাওয়ালাদের বলেন তিনি নাকি কোনো বাজে খরচা করেন না। তাঁরা যদি তার একটাও বাজে খরচের উদাহরণ দেখাতে পারেন, তবেই তিনি চাঁদা দেবেন। আদায়কারীরাও সেয়ানা। একজন বললে ‘আপনার কোন চোখটা খারাপ?’
- ডান চোখ
- তাহলে চশমায় দুটো পরকলা কেন?
আরও পড়ুন
‘কচু ঘেঁচু’ জোটে দুর্গার কপালে! কবিতা ফাঁদলেন বঙ্কিম
বাবু খুশি হয়ে তাঁদের একটাকা চাঁদা দিলেন।
অনেকসময় ‘চোটের কথা কয়ে বড় মানুষদের তুষ্ট করে তাঁরা চাঁদা আদায় কত্তেন’...
আরও পড়ুন
ঢাকেশ্বরীর আদলে কলকাতায় অষ্টধাতুর দুর্গামূর্তি, এখনও চলছে সেই পুজো
এই চোটের কথার একটা দারুণ গল্প আছে। সিংহ পরিবারের এক ভদ্রলোক কিছুতেই টাকা দিচ্ছেন না। একদিন তিনি আপিসে বেরুবার জন্য রওয়ানা হতেই তিন চারটি ছেলে এসে তাঁকে জড়িয়ে ‘পেয়েছি, পেয়েছি’ বলে চিৎকার করতে লাগল। সিংহবাবু অবাক! ব্যাপারখানা কী?
ছেলেরা বলল ‘মশাই, আমাদের বারোয়ারী পূজায় দেবী সিংহ চড়ে কৈলাস থেকে আসছিলেন। মাঝপথে সিংহের পা গেছে ভেঙে। দেবী আর আসতে পারছেন না। আমাদের বললেন ভালো দেখে একটা সিংহ খুঁজে আনতে। অনেক খুঁজে আপনার চেয়ে ভালো সিংহ পেলাম না। এবার চলুন, মায়ের যাতে আসা হয় তার তদবির করবেন।’
এই শুনে সিংহ মশাই যা হাসলেন শুনে নাকি রাস্তায় লোক দাঁড়িয়ে গেল। খুশি হয়ে তিনি চাঁদাওয়ালাদের বিলক্ষণ দশটাকা চাঁদা দিলেন।
Powered by Froala Editor