‘কচু ঘেঁচু’ জোটে দুর্গার কপালে! কবিতা ফাঁদলেন বঙ্কিম

পুজোকে নিয়ে বাংলায় কবিতার শেষ নেই। স্বয়ং বঙ্কিমচন্দ্র দুঃখ করে লিখেছেন, ‘বর্ষে বর্ষে এসে মাগো খাও লুচি পাঁটা/ ছোলা কলা কচু ঘেঁচু যা জোটে কপালে/ যে হোল দেশের দশা, নাই বড় সে ভরসা/ আসবে যাবে খাবে নেবে সম্বৎসর কালে।’

তবু প্রতি বছর আসে পুজো। জমে ওঠে। নবমীর দিন বাই নাচ চরমে উঠত। দীনবন্ধু মিত্র তাঁর ‘সুরধুনী কাব্য’-তে শোভাবাজার রাজবাড়িতে নবমীর রাতের দারুণ সুন্দর এক ছবি এঁকেছেন—

‘বসিয়াছে বাবুগণ করি রম্য বেশ
মাতায় জড়ির টুপি, কাঁপাইয়া কেশ
বসেছে সাহেব ধরি চুরুট বদনে
মেয়াম ঢাকিছে ওষ্ঠ মোহন ব্যাজনে,
নাচিছে নর্তকী দুটি কাঁপাইয়া কর
মধুর সারং বাজে কল মনোহর...’

সাহেবদের খুশি করতে কত কী না করতে হত। প্রাণকৃষ্ণ দত্ত জানিয়েছেন, ‘কালীশঙ্কর ঘোষের বাটীর গুরু পুরোহিত কর্তা প্রভৃতি পুরুষ, অন্দরে গৃহিণী এবং সমস্ত পুরনারী মায় দাসদাসীদের সুরাপান করিতে হইত।’ একদিন মাতাল কালীশঙ্করের পা টিপছে এক মাতাল চাকর। হঠাৎ সে ডুকরে কেঁদে উঠল। ‘বাবু বলিলেন, তুই কাঁদিতেছিস কেন রে? উত্তর হইল, কর্তা আপনার একখানা পা খুঁজিয়া পাইতেছি, আর একখানা বোধ হয় হারাইয়া ফেলিয়াছি, খুঁজিয়া পাইতেছি না।

আরও পড়ুন
দুর্গাপুজোয় খরচ ১৭ টাকা, শক্তি-আরাধনা করেই কপাল ফিরল সাহেবের

বাবু হাসিয়া কহিলেন, তা চিন্তা কি বোধ হয় জল খাবারের জায়গায় ফেলিয়া আসিয়াছি। যা বাটীর ভিতর হইতে লইয়া আয়।’

আরও পড়ুন
দুর্গাপুজোর পদ্ধতি নিয়ে শাক্ত-বৈষ্ণবে বিবাদ, সমাধান মিলল সিংহে

প্রাণকৃষ্ণ দত্ত আরও লিখেছেন, ‘নবমীর বলিদানের আমোদ আরও অদ্ভুত। কেবল মহিষ মেষ ছাগ কুষ্মাণ্ড ও আখ বলি নহে, তাহার পর আমোদ করিয়া গোধিকা, কপোত, মাগুরমাছ, লেবু, সুপারি এমনকি গোলমরিচ অবধি বলিদান হইত। বলিদান শেষ হইলেই শুরু হইত নৃত্য। সেই রক্তপ্লাবিত প্রাঙ্গণে মোষের মুণ্ড, আখ, লেবু, নারিকেল লইয়া কাড়াকাড়ি আর রক্তে গড়াগড়ি দেওয়া হইত।’

আরও পড়ুন
‘গড সেভ দ্য কিং’ গান দিয়ে শুরু দুর্গাপুজো, খাবারের আয়োজনে ক্যাটারার!

তবে সাবেক কলকেতার সেরা তিন পুজো ছিল দাঁ বাড়ি, মিত্র বাড়ি আর স' বাজারের রাজবাড়ি। প্রচলিত কথাই ছিল ‘মা আসিয়া গহনা পরেন শিবকৃষ্ণ দাঁ -র বাটী, ভোজন করেন কুমারটুলির অভয়চরণ মিত্রের বাটী আর রাত জাগরণ করিয়া বাইনাচ দেখেন স' বাজারের রাজবাটীতে।’

আর এই সব দেখেই কবি ঈশ্বর গুপ্ত লেখেন—

‘ধন্য ধন্য কলিকাতা ধরেছে কলির ছাতা
ধন্য তব নব ব্যবহার।
হইতেছে কত রঙ্গ নাহি মাত্র তালভঙ্গ
বঙ্গদেশ পদে নমস্কার।।’

Powered by Froala Editor