সাহেবদের পুজোর গল্পের পরে এক মজার নেটিভ পুজোর গল্প বলি। দেড়শো বছরের বেশি পুরনো মুখুজ্জে বাড়ির পুজোর গল্প।
যশোহর নিবাসী জগৎরাম মুখোপাধ্যায় সুখেই ঘরকন্না করছিলেন। বয়স তখন তিরিশ হবে, আকস্মিক মৃত্যু হয় তাঁর। কিস্তু শ্মশানঘাটে হঠাৎই আবার প্রাণ ফিরে পান। এই অদ্ভুত ঘটনায় বাড়ির লোক খুশি হয়েছিলেন হয়তো, কিন্তু তৎকালীন সামাজিক আচারবিচারের জন্য তাঁর আর ঘরে ফেরা হয়নি। অগত্যা গঙ্গার এ পারে এসে বেহালা চত্বরে বসবাস শুরু করেন এবং পরবর্তীকালে অযোধ্যা হালদারের মেয়ের সঙ্গে তার বিবাহ সম্পন্ন হয়।
১৭৭০ সাল। জগৎরামের চার ছেলে ও একমাত্র কন্যা জগত্তারিণী প্রত্যেকবারের মতো সে বছরও গেছে মামার বাড়ির দুর্গাপুজায়। কিন্তু আদরিণী মেয়ের মনে হল তাকে যেন কিছুটা অবহেলা করা হচ্ছে সেখানে। অভিমান করে বাড়ি ফিরেই বাবাকে জানাল সেও বাড়িতে দুর্গাপুজো করবে। তাও আবার এই বছরেই। সেদিন ছিল অষ্টমী। মেয়ের জেদের কাছে নতি স্বীকার করে পর দিনই ঘটে-পটে পুজো করলেন জগৎরাম। মায়ের ভোগ ছিল খিচুড়ি আর কলাই ডাল। পুজোর সেই শুরু। জগৎরামের নাতি যদুনাথ মুখোপাধ্যায় কর্মসূত্রে ঢাকায় থাকাকালীন ঢাকেশ্বরীর মূর্তি দেখে ঠিক করলেন, কলকাতার বাড়িতে সেই আদলে সোনার দুর্গামূর্তি গড়বেন। কিন্তু শুধু সোনার তৈরি প্রতিমায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয় না বলে অষ্টধাতু সংযোগে মাতৃমূর্তি স্থাপন করলেন ১৮৬৯-এ। এখনও সেই পুজো চলছে।
শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজোর আবার অন্য ধুমধাম। রাধাকান্ত দেববাহাদুর সেখানে ভারি জাঁকের পুজো করতেন। সাধারণ লোকের ঢোকার অধিকার ছিল না। তাঁরা দাঁড়িয়ে থাকতেন ফটকের বাইরে। ভিতরে ঢুকতে গেলে রীতিমতো টিকিট লাগত। তবে টিকিটধারী বড়োলোক আর পুজোর বাবুর সঙ্গে সাক্ষাৎ হত না প্রায়ই। হুতোম লিখছেন “নিমন্ত্রিতে আর কর্মকর্তায় চোরে কামারে সাক্ষাত-ও হয় না। পুরোহিত বলে দ্যান ‘বাবুরা ওপরে, ওই সিঁড়ি, মশাই যান না!’ কিন্তু নিমন্ত্রিতরা ‘আজ্ঞে না আরও পাঁচ জায়গায় যেতে হবে, থাক’ বলে টাকাটুকু দিয়ে ওমনি গাড়িতে ওঠেন।” কোথাও কর্তার সঙ্গে দেখা হয়ে গেলেও উভয়ে গিরগিটির মতো ঘাড় নাড়েন— সন্দেশ মেঠাই পান, তামাক তো দূরস্থান সে সব বাড়িতে সাদর সম্ভাষণটুকুও মিলত না। বাবু নিজের ফুর্তিতে মশগুল। ‘কোন বাড়ির বৈঠকখানায় চোহেলের রৈ রৈ ও হৈচৈয়ের তুফানে নেমন্তন্নের সেঁধুতে ভরসা হয় না— পাছে কর্মকর্তা তেড়ে কামড়ান’-এর মধ্যেও মজা হত। একবার একবাবুর বলির জন্য পাঁঠা এসেছে। জয়হরি তর্কালঙ্কারের বার্ষিক হিসেবে সে পাঁঠাবলি হবে। বলি দিতে গিয়ে সবাই দেখে ও হরি, এ যে পাঁঠা না, খাসি। বাবু তখন সবে নেশার খোঁয়ারি ভেঙে পুজো দেখতে এসেছেন। সবাই ভাবলে বাবু ভারি রেগে যাবেন। তা তো হলেনই না বরং তিনি সেই খাসিকে দুপুরবেলার জন্য ‘নিমখাসা রকমের রোস্ট করতে বললেন’।
আরও পড়ুন
দুর্গাপুজোয় খরচ ১৭ টাকা, শক্তি-আরাধনা করেই কপাল ফিরল সাহেবের
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
‘গড সেভ দ্য কিং’ গান দিয়ে শুরু দুর্গাপুজো, খাবারের আয়োজনে ক্যাটারার!