১৭৫৭ সালে আচমকা বঙ্গবিজয় করে আনন্দে উদ্বাহু ক্লাইভ এই জয় স্বয়ং ঈশ্বরকে উৎসর্গ করতে চাইলেন। কিন্তু কি আফসোস, কলকাতাকে আলিনগর বানানোর সঙ্গে সঙ্গে সিরাজ নাকি কলকাতার একমাত্র গীর্জাটাও ধ্বংস করে দেন। সেই বিপদ থেকে ক্লাইভকে উদ্ধার করেন তাঁর ফারসি শিক্ষক নবকৃষ্ণ দেব। তিনিই ক্লাইভকে বলেন এ বিজয় মা দুর্গাকে উৎসর্গ করতে। ক্লাইভ রাজি হলে নবকৃষ্ণ সুতানটির শোভাবাজারে নিজের বাড়িতে ইংরেজদের বিজয় উদযাপন করতে এক দুর্গাপুজোর আয়োজন করেন। এ পুজো তাই অনেকদিন অবধি কোম্পানির পুজো নামে খ্যাত ছিল।
এ ইতিহাসের পক্ষে বিপক্ষে অনেক মত আছে। তবে কয়েকটা ঘটনা একেবারে সত্যি। ইংরেজ রাজপুরুষরা এই অনুষ্ঠানে রীতিমত যোগ দিতেন সপরিবারে। পুজো শুরুর আগে রাজা রাণীর নামে জয়ধ্বনিও করা হত। শুধু তাই নয়, ইংরেজকে খুশি রাখতে পুজো শুরুর আগে সুর করে গাওয়া হত-
উড়িষ্যা-বেহার- বঙ্গ অধিপতি
সিরাজ-উদ-দৌলা যবন কুমতি,
পরাজিত হইয়া ক্লাইবের বলে
ত্যাজিল ধরণী আধার।
ক্লাইবের গুণে কলিকাতা মাঝে
ফোর্ট উইলিয়াল দুর্গ বিরাজে,
অরিকুল-বীরগণ-দুরজের
ভূধরগহবর মতন।
পুজোর মরশুম এলেই ইংরেজদের পোয়াবারো। তাঁদের সবচেয়ে বিক্রিত পত্রিকা ইংলিশম্যানের পাতায় পাতায় লেখা থাকত এ বছর কোন কোন পুজো সবচেয়ে " স্পেন্ডিড" হতে পারে, তার বিবরণ। কোথায় কোনবাই আসছে, কোন বাড়ি কেমন করে সাজানো হচ্ছে, তার গল্পেই গোটা কাগজ ভরা থাকত। মুসলিমরাও ইংরেজদের খুশি রাখতে একবার এসে দেবীকে সেলাম করে যেতেন। একবারই শুধু মহরম আর পুজো একসঙ্গে পড়ায় বাই নাচ হয় নি। সেবার গোপীমোহন দেবের বাড়ি ব্রহ্মদেশ থেকে নাচওয়ালী আনা হল। সে পুজো শুরু হল সমবেত কণ্ঠে " গড সেভ দি কিং" গেয়ে। সাহেবরা অপেক্ষায় থাকতেন এবার কোন বাড়ি থেকে নিমন্ত্রণ আসে... পুজোর ক'দিন রাস্তাঘাট ফাঁকা, সবাই ছুটেছে পুজোবাড়িতে। সেখানে বিদেশী অতিথিদের জন্য থরে থরে খাবার সাজানো। সেই খাবার আবার সাপ্লাই দিতেন বিদেশী ক্যাটারার মেসার্স গাটার এন্ড হপার।
এইসব দেখে এক ছোকরা সাহেব তো কবিতাই লিখে বসলেন-
The Church, the must, the court of law,
The everywhere is deserted
The very crows have ceased to caw
And echo's broken hearted:
The palaced town in single stands
For none are left in it to join,
Being off for the DURGA-PUJA
আরও পড়ুন
পাথরের মূর্তি বদলে গেল মৃন্ময়ীতে, পেখম মেলল চালচিত্র
Powered by Froala Editor