‘দুর্গাপুজোর রং তামাসা
পড় দিয়ে একটি পয়সা’
পুজোর গল্পে পুজো সংখ্যার কথা হবে না, তা কি হয়? প্রতিবার দুর্গাপুজোর সময় বটতলার টালাবাগান রোড থেকে প্রকাশ পেত নানা পুস্তিকা। বারো পাতার। ষোলো পাতার। তাতে থাকত নানা রঙ্গ। থাকত বড়লোকদের প্রতি তেরছা চাউনি।
‘এবার পূজায় গিরিবালা/ চেয়েছেন সোনার থালা/ দুর্গাপুজার ভারি ধূম/ ভেবে লোকের নাইকো ঘুম’— এমনই লিখেছেন শরচ্চন্দ্র দেব, ১৮৯৫ সালের পুস্তিকায়। তার দুই বছর পরেই কে এন শীল প্রকাশিত এন ঠাকুর রচিত পুস্তিকায় দেখি মলাটে একচালা দুর্গার ছবি। তলায় লেখা—
‘এবার পূজায় বিষম দায়
বউ পাঁচশ টাকা চায়।।
ঢাকাই শাড়ী সোনার গয়না
সে সবে আর মন বোঝে না।।’... ইত্যাদি
আরও পড়ুন
দুর্গা-আরাধনার সঙ্গে যেভাবে মিশে গেল নবপত্রিকা-পুজোও
আর একটি পুস্তিকা গণেশ চন্দ্র পাইন দ্বারা মুদ্রিত। মলাটেই ঘোষণা—
আরও পড়ুন
দুর্গাপুজো করে দ্বিগুণ মুনাফা, আমৃত্যু দেবী-আরাধনা ‘বিধর্মী’ চিকবাহাদুরের
‘যদি রসের কথা পড়তে চাও/ একটি পয়সায় কিনে নাও’। সে রস অবশ্য বেশ মোটা দাগের। এককালে যখন শারদীয়া পত্রিকার এত হুলুস্থুলু ছিল না, তখন এরাই পাঠকের মন ভরাত।
আরও পড়ুন
পা ভেঙেছে দুর্গার বাহনের, সিংহ পরিবারের কর্তাকে ঘিরে ধরল সবাই
‘গিন্নির আবদার- এ পুজোতে ফরমাস মত চাই গয়না
আমি তোমার তক্ক নক্ক কিছুই শুনব না
যদি দাও প্রাণ এসব জিনিস
দিব্বি করে কচ্ছি প্রমিস
তাহলে আমি সুখে করব ঘরকন্না’
একজন জোরে জোরে পাঠ করতেন, আর আ শুনে বাকিরা হেসে লুটোপুটি খেতেন।
প্রথম শারদীয়া সাহিত্য পত্রিকা সম্ভবত ‘ছুটির সুলভ’। সুলভ সমাচার পত্রিকার শারদ সংখ্যা। ১২৮০ সনের ১০ আশ্বিন প্রকাশিত পত্রিকার বিজ্ঞাপনে লেখা ছিল ‘আগামী ছুটি উপলক্ষে সুলভের এক বিশেষ খন্দ বাহির হইল। উত্তম কাগজ, উত্তম ছাপা। দাম কিন্তু এক পয়সা।’ কী ছিল এতে? ছিল সত্যি গল্প। এক মাতাল জমিদার ছেলের বিয়ে দিতে গিয়ে কি কাণ্ডই না ঘটিয়েছেন! সেবার রেল কোম্পানি নিয়ম করেছেন তৃতীয় শ্রেণির যাত্রীরা ৫ কেজির বেশি বোঁচকা নিতে পারবেন না। এর বিপক্ষে প্রবন্ধ ছিল। ছিল অশ্লীলতা নিবারণ নিয়ে আলোচনা ‘মদে ব্যাভিচারে দেশ রসাতলে যাইতেছে...’। ছিল কৌতুক, কবিতা। একটা না বললে নিতান্ত অন্যায় হবে। আসাম অঞ্চলে চা বাগানের মালিকরা নাকি দুরন্ত অত্যাচারী ছিল। তা এক ভদ্রলোককে সেই বাগানে ম্যানেজারি করতে বলায় তিনি অস্বীকার করেন এই বলে ‘বাবা! এমন কাজে কাজ নাই। চা-করের চাকর কে হইবে?’
Powered by Froala Editor