“ছবি আঁকার বিষয়ে তো ছোটো থেকেই একটা ধারণা তৈরি হয়ে যায় অনেকের। কিন্তু স্কাল্পচার, বা ফাউন্ড অবজেক্ট আর্ট নিয়ে ধারণাটা থাকে না। অথচ প্রায় একশো বছর আগে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই বিষয়টা নিয়ে ভেবেছিলেন, আর ছোটোদের জন্যই ভেবেছিলেন।” বলছিলেন কোন্নগরের শিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পঞ্চরথীর সদস্য শিল্পী উষ্ণীষ মুখোপাধ্যায়। গতকাল থেকে পঞ্চরথীর উদ্যোগেই শুরু হয়েছে এক ব্যতিক্রমী কর্মশালা (Workshop)। আর এই কর্মশালার ঠিকানা খোদ অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Abanindranath Tagore) বাগানবাড়ি।
দীর্ঘদিন নবরূপায়ণের জন্য বন্ধ থাকার পর বছর দুয়েক আগে আবার খুলে গিয়েছে কোন্নগরে অবনীন্দ্রনাথের বাগানবাড়ির ফটক। এর মধ্যে গতবছর কোভিডের কারণে কোনো কর্মশালার আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। তবে এবারের বার্ষিক কর্মশালার জন্য এই বাগানবাড়িটিকেই বেছে নিয়েছেন পঞ্চরথীর সদস্যরা। আর তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই আজ আয়োজন করা হয়েছে ‘কুটুম কাটাম’-এর কর্মশালার। গত ২৬ ডিসেম্বর থেকেই শুরু হয়েছে এই কর্মশালা। চলবে আগামীকাল অর্থাৎ ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সকাল ১০টা থেকে শুরু করে বিকেল ৪টে পর্যন্ত খোলা থাকছে কর্মশালার দরজা। গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের প্রাক্তনী সীতাংশু মণ্ডল গাছের ডাল ও অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে খেলনা ও মূর্তি তৈরি শেখাবেন প্রায় জনা পঞ্চাশ ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েকে। উষ্ণীষ বলছিলেন, “একদিনের কর্মশালায় হয়তো বেশি কিছু শেখানো সম্ভব হবে না। কিন্তু অবনীন্দ্রনাথের সৃষ্টি এই ভিন্ন ধারার শিল্প মাধ্যমটি সম্বন্ধে ছাত্রছাত্রীদের মনের মধ্যে একটা আগ্রহ তৈরি করে দেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা।”
আরও পড়ুন
পক্ষাঘাতে হারিয়েছে চলচ্ছক্তি, মুখ দিয়েই ছবি আঁকেন বাংলাদেশের শিল্পী
কুটুম কাটামের কর্মশালাটির পাশাপাশি আগামীকাল আয়োজিত হবে একটি জলরঙের কর্মশালা। এই কর্মশালাটি তত্ত্বাবধান করবেন গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের আরেক প্রাক্তনী কৌশিক রাহা। এছাড়াও রয়েছে আরও একটি আকর্ষণ। বাগানবাড়ি চত্বরে ঢুকলেই চোখে পড়বে ৯ ফুট বাই ১০ ফুটের একটি বিরাট ক্যানভাসের উপর আঁকা হচ্ছে দেশের প্রাক্তন সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াতের প্রতিকৃতি। গতকাল থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে এই প্রতিকৃতি আঁকার কাজ। পঞ্চরথীর সম্পাদক সপ্তর্ষি রাহা জানালেন, ২০১৩ সাল থেকেই এই ধরণের বড়ো ক্যানভাসের উপর সকলে মিলে ছবি আঁকার উদ্যোগ নিয়ে আসছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন
অর্থাভাবে শিখতে পারেননি ছবি আঁকা, শিল্পের খিদে মেটাতে কাটুম-কুটুমই আশ্রয় পবন লোহারের
২০০৫ সালে ৫ জন শিল্পীর উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই কেন্দ্রটি যে কোনোদিন এত বড়ো উদ্যোগ নিতে পারবে, সেটা হয়তো সেদিনই ভাবেননি কেউ। ২০১৬ সাল থেকে শুরু হয় বার্ষিক কর্মশালার আয়োজন। শুধুমাত্র চিত্রকলা প্রশিক্ষণের বাইরে বেরিয়ে মুখোশ থেকে শুরু করে নানারকম ফাউন্ড আর্ট নিয়ে কাজ করেছেন আগেও। আর এবার সেই আয়োজনের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামও। এই আয়োজনের ভিতর দিয়ে যদি অবনীন্দ্রনাথের শিল্পকলার নানা ব্যতিক্রমী ধারা এবং পরীক্ষানিরীক্ষার বিষয়ে একটা প্রচার গড়ে তোলা যায়, তাহলে সেটুকুই এই উদ্যোগের সাফল্য। এমনটাই মনে করছেন আয়োজকরা।
Powered by Froala Editor